Bablu Malakar

पवित्र वेद धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते

ঈশ্বর কিভাবে জীবাত্মা রূপে বুদ্ধিতে তিনি প্রতিবিম্বিত হন?

স্বয়ং ঈশ্বর বলছেন, সবারই ভেতরে সেই আত্মা বা চৈতন্য, সেই আত্মাই সমস্ত জগৎ এবং প্রতিটি জীবকে ধারণ করে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। উপমা দিয়ে বলছেন জগপ্তি নিত্যং পরিতো ভ্রমন্তি যৎসন্নিধৌ চুম্বকলৌহবন্ধি, যেমন চুম্বকের সান্নিধ্যে লোহা এলে লোহা নড়তে শুরু করে, চুম্বককে যেমন যেমন নাড়াবে লোহা তেমন তেমন নড়বে, চুম্বককে লোহার সান্নিধ্য থেকে সরিয়ে নিলে লোহা নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকবে। ঠিক তেমনি শরীরের ভেতরে চৈতন্য আছে বলেই শরীর চলছে, শরীরের ভেতর থেকে চৈতন্যকে সরিয়ে দিলে শরীরটা নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকবে। সংসারের ভেতর ভগবানই আছেন তাই এই সংসার চলছে। ভগবানের প্রকাশের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমের দরকার হয়, বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য ভগবানের প্রকাশও ভিন্ন ভিন্ন হয়। জীবাত্মার মাধ্যমে যখন তাঁর প্রকাশ হয় তখন শরীরে তাঁর এক রকম প্রকাশ হয়, বস্তুতে সরাসরি যখন আসছেন তখন তাঁর প্রকাশ ভালো হয় না। যেমন এ্যটম, এ্যটমের মধ্যে তিনি অন্তর্যামী হয়ে বসে আছেন, কিন্তু সেটা দিয়ে এ্যটমের প্রকৃতি পাল্টায় না। কিন্তু যখন জীবাত্মা রূপে বুদ্ধিতে তিনি প্রতিবিম্বিত হন তখন তাঁর প্রকাশ আলাদা হয়ে যায়, পরে এই নিয়ে আরও বলবেন।

স্বয়ং ঈশ্বর বলছেন,

এতন্ন জানন্তি বিমূঢ়চিত্তাঃ স্থাবিদায়া সংবৃতমানসা যে।
স্বাজ্ঞানমপ্যাত্মনি শুদ্ধবোধে স্বারোপয়ন্তীহ নিরস্তমায়ে।।
(অধ্যাত্ম রামায়ণ, ১/১/১৯)।

সাধারণ মানুষ অবিদ্যা আর অজ্ঞানে এমন ভাবে আবৃত হয়ে আছে যে, তারা মনে করতে থাকে যাঁরা জানী পুরুষ তাঁদেরও এই একই অবস্থা। ঠাকুর যেমন বলছেন, মূলো খেলে মূলোর ঢেকুর উঠবে। তুমি যদি নিজে অজ্ঞানে পড়ে থাক তোমার সামনের লোককেও তোমার অজ্ঞানী বলে মনে হবে। একজন লোক রাত্রিবেলা রাস্থায় উল্টে পড়ে আছে। একটা চোর সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, লোকটিকে দেখে সে ভাবছে সারা রাত চুরির চেষ্টা করে এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর একটা মাতাল যাচ্ছিল, সে বলছে, সারা রাত এমন টেনেছে যে এখন আর হুঁশ আসছে না। তারপর একজন সাধু যাচ্ছিলেন, সাধু ভাবছেন, সারা রাত জপধ্যান করে এখন বেচারী ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাদের ভেতরটা যেমন বাইরের জগতটাও তেমনই হবে। সাধারণ মানুষ অজ্ঞানী, সবাই কামিনী- কাঞ্চনে আসক্ত, তারা সাধু মহাত্মা বা জ্ঞানী পুরুষকেও তাই ভাবে, ব্যাটা লুকিয়ে লুকিয়ে গুড় খায়। আর যাঁরা সৎ পুরুষ তাঁরা সব কিছু অন্য রকম দেখেন। জগতকে আমি কেমন দেখছি বুঝতে পারলে আমি কেমন বুঝতে পারব। আধ্যাত্মিক ব্যাপারে সবাই যে অজ্ঞান এতে কোন সন্দেহ নেই। সেইজন্য অবতার পুরুষের মধ্যে সবাই অজ্ঞানই দেখে, যীশুর মধ্যেও অজ্ঞান দেখে, মহম্মদের মধ্যেও অজ্ঞান দেখে, বুদ্ধের মধ্যেও অজ্ঞান দেখে। এরা যদি শ্রীরামচন্দ্রের ব্যাপারে প্রশ্ন করে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। যার যেমন মানসিক গঠন, যেমন যেমন মানসিকতা তেমন তেমন বিচার করতে থাকবে।

সংসারমেবানুসরস্তি তে বৈ পুত্রাদিসক্তায়। পুরুকর্মাযুক্তাঃ।
জানান্তি নৈবং হৃদয়স্থিতং বৈ, চামীকরং কন্ঠগতং যথাজ্ঞাঃ।।
(অধ্যাত্ম রামায়ণ, ১/১/২০)।

স্ত্রী-পুত্রাদিতে যারা আসক্ত হয়ে আছে তারা যে ভগবানের উপর অজ্ঞানতা বশতঃ এই জিনিসগুলো আরোপ করবে এতে আশ্চর্যের কি আছে। আপনার আসক্তি কোথায়, মন কোথায় বেশি পড়ে থাকে তাই দিয়ে বোঝা যাবে ঈশ্বরের ব্যাপারে আপনার ভাবনা চিন্তা কেমন, সমাজের কোন লোক যদি কারুর নিন্দা করে, বিশেষ করে কোন মহৎ পুরুষের, এটাই স্পষ্ট করে দেয় যে তার আসক্তিটাও অত্যন্ত নিম্নস্তরের। একদিকে এরা স্ত্রী-পুত্রে একেবারে আসক্ত আবার অন্য দিকে বড় বড় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করতে থাকে। বলছেন এসব করেই এরা সব সময় এই সংসারের অনুসরণ করতে থাকে, পরমাত্মাকে কখনই জানতে পারে না। এরপর শিব খুব সুন্দর একটা কথা বলছেন, এই ধারণাটা প্রায়ই আসে—

যথাহ প্রকাশো নত্ব বিদ্যতে রবৌ জ্যোতিঃ স্বভাবাৎ পরমেশ্বরে তথা।
বিশুদ্ধবিজ্ঞানঘন রঘুত্তমেহবিদ্যা কথং স্যাৎ পরতঃ পরাত্মনি।।
(অধ্যাত্ম রামায়ণ, ১/১/২১)।

সূর্য্যে কখন অন্ধকার হয় না, কারণ সূর্য্য জ্যোতিঃস্বরূপ, জ্যোতিঃস্বরূপে কখন অন্ধকার হয় না। ভগবান যিনি তিনি বিশুদ্ধবিজ্ঞানঘন স্বরূপ, তাই তাঁর কখন অজ্ঞান আবার কখন জ্ঞান এই জিনিস হবে না। আচার্য শঙ্কর যিনি এত বড় বেদান্তী, তিনিও গীতার ভাষ্যে অবতার তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুরুই করছেন স চ ভগবান জানৈশ্বর্যশক্তিবলবীর্যতেজোভির সদ্য সম্পন্নঃ যিনি ভগবান তিনি জানে সদাসম্পন্ন। এই একই কথা অধ্যাত্ম রামায়ণে যা বলছেন, গীতাতে যা বলছেন, আচার্য শঙ্করও সেটাই বলছেন, ঠাকুরও তাই বলছেন। ঠাকুরের জ্ঞান কি দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর সাধনা করার পর হয়েছে? তা নয়, ঠাকুরের জ্ঞান চিরদিনই ছিল। এটা ঠিক যে বিভিন্ন লোক এসে ঠাকুরকে বিভিন্ন কথা শোনাচ্ছেন, অনেক কিছু দেখাচ্ছেন, ঠাকুরও মানব রূপে শুনছেন, দেখছেন। কিন্তু তিনি কখন অজ্ঞানে ছিলেন আবার কখন জ্ঞানে ছিলেন এই জিনিস কখনই হবে না। অজ্ঞানীরাই অবতারের সম্বন্ধে এই ধরণের নানা রকমের বিচার করতে থাকে।

আমরা অতি সৌভাগ্যবান যে এমন এক সময়ে আমরা জন্ম নিয়েছি যখন ঈশ্বরের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হচ্ছে। যেমন অনেকেই প্রশ্ন করে যে শ্রীকৃষ্ণ যদি চাইতেন মহাভারতের যুদ্ধ হত না। শ্রীকৃষ্ণ কি কোন ম্যাজিসিয়ান নাকি! কালের গতিকে যিনি থামিয়ে দেবেন! অবতার কখনই কালের গতিকে আটকাবেন না, প্রকৃতির নিয়ম কখনই অবতার উল্লঙ্গন করবেন না। 

আমার যদি শ্রীরামকৃষ্ণের কথা বলতে যায়—

শ্রীরামকৃষ্ণ কোন এক অজানা অচেনা গ্রাম কামারপুকুরে গিয়ে জন্ম নিলেন, যেখানে না আছে শিক্ষা, না আছে খাদ্য, না আছে স্বাস্থ্য, না আছে টাকা-পয়সা। আর সেখানে ঠাকুর জন্ম নিতেই ম্যাজিকের মত আকাশ থেকে খাদ্য, টাকা সব ঝরে পড়তে শুরু করে দেবে! আর জন্যেই ঠাকুরের মুখ থেকে বেদ, বেদান্ত সব বেরোতে শুরু করে দেবে! যদি এই রকম কিছু হয় তার পরের দিনেই সবাই বলবে ভূতে পেয়েছে। দক্ষিণেশ্বরে সাধনা করছেন আর তাতেই লোকেরা বলতে শুরু করল এর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে একে তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে দিয়ে দাও। আর ছয় মাস বয়সে যদি বেদ, উপনিষদ মুখ থেকে বেরিয়ে আসত তাহলে তাঁকে যে লোকেরা কি করত ভগবান জানেন।

আমাদের ভেবে দেখা দরকার, আমরা একজন অবতার থেকে ঠিক কি চাইছি?

যেমন কোনো এক অচেনা গ্রাম কামারপুকুর, সেখানে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান রূপে তিনি এলেন। এরপর তাঁকে ওখানকার সব কিছুকে সম্বল করেই এগোতে হবে, সেই দারিদ্র, অশিক্ষা, ম্যালেরিয়া এসবের মধ্য দিয়েই অবতারকেও বড় হতে হবে। যদি এভাবে না হন তাহলে ম্যাজিসিয়ান হয়ে যাবেন। যে জিনিস শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একই জিনিস শ্রীরামচন্দ্রের উপরেও প্রযোজ্য হবে। মুশকিল হল বেশির ভাগ ভক্তরাই ভাবপ্রবণ হয়, তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেইজন্য অনেক কিছু উপকরণ দিয়ে অবতারের কাহিনী সাজানো হয়। যাদের মন খুব মুক্তিপ্রবণ তারা আবার এসব কাহিনী নিতে চাইবে না। সবাইকে তাদের মানসিকতা ও রুচী অনুযায়ী সন্তুষ্ট করতে ধর্মকেই এগিয়ে আসতে হয়, সেখান থেকে এই ধরণের নতুন নতুন শাস্ত্রের জন্ম হয়।

শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন—

কেউ যদি একই জায়গায় ঘুরতে থাকে তখন তার মনে হয় ঘরবাড়ি, গাছপালা সব কিছু বন্ বন্ করে ঘুরছে। ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষ ইন্দ্রিয়ের যা কিছু ক্রিয়া সবটাই আত্মার উপর আরোপ করে দেয়, ফলে তারা মনে করে আত্মাই সব করছে। অধ্যাত্ম রামায়ণে এখানে শ্রীরামচন্দ্রকে ভগবান রূপেও দেখছেন না, একেবারে আত্মা রূপে দেখছেন। যদি শ্রীরামচন্দ্রের উপর কোন ক্রিয়ার আরোপ করা হয় তাহলে আত্মার উপরে ক্রিয়ার আরোপ হয়ে যায়, আত্মাকেই কর্তা বানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আত্মা কখনই কর্তা হন না, কারণ আত্মার উপর কর্তৃত্ব ভোকৃত্বের নিষেধ করা হয়েছে, পুরো বেদান্ত এই সিদ্ধান্তের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। যিনি ঈশ্বর তিনিই সচ্চিদানন্দ, তিনিই আত্মা, তিনিই আবার সবার অন্তর্যামী, এর উপর কখনই কর্তৃত্ব ভোক্তৃত্ব আসে না, গীতায় ভগবান বলছেন ন কর্তৃত্বং ন কর্মাণি লোকস্য সৃজতি প্রভু। ভেতরে যিনি আছেন উনি কর্তৃত্ব সৃষ্টি করেন না, ন কর্মফলসংযোগং, তিনি কর্মের সঙ্গে ফলের কোন সংযোগও করবেন না। আত্মা যা করেন ঈশ্বরও ঠিক তাই করেন, ঈশ্বর পরমাত্মা সচ্চিদানন্দ তিনি যা করেন অবতারও ঠিক তাই করেন। অবতার তত্ত্বের উপর একটি খুব সুন্দর শ্লোকে বলছেন–

নাহো ন রাত্রিঃ সবিতৃর্যথা ভবেৎ প্রকাশরূপাব্যভিচারতঃ কচিৎ
জ্ঞানং তথ্যজ্ঞানমিদং স্বয়ং হরেী রামে কথং স্থাস্যতি শুদ্ধাচিদ্‌ঘনে।।
(অধ্যাত্ম রামায়ণ, ১/১/২৩)।

সূর্য জোতিঃস্বরূপ, সূর্যে দিনও নেই রাতও নেই। দিন ও রাতকে বোঝার জন্য আলোর ব্যভিচার দরকার। আমাদের পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে বা প্রতিদিন সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত হচ্ছে, তাই পৃথিবীতে আলো কখন বাড়ছে কখন কমে একেবারে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, আলো বাড়া আর কমা দিয়ে আমরা পৃথিবীর দিন ও রাত্রির বিচার করছি। কিন্তু আমরা যদি এ্যটমিক ঘড়িও লাগাই তাহলেও সূর্যে কখনও দিন কখনও রাত বলা যাবে না। টাইমের প্যাসেজ হতে পারে, আইনস্টাইনের বিভিন্ন থিয়োরিতে টাইমও পাল্টে যায়। কিন্তু সূর্য যা কিনা জ্যোতিঃস্বরূপ, তার না আছে দিন না আছে রাত। সমুদ্রের গভীরে কোন গুহায় যদি চলে যাওয়া যায়, সেখানেও দিন হবে না রাতও হবে না। বলছেন যেভাবে সূর্যে দিন ও রাত্রি কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি ঈশ্বরে জ্ঞান ও অজ্ঞানের কোন প্রশ্নই হবে না।

ঈশ্বর তিনি পরমাত্মা, তিনি হলেন মায়ার অধিষ্ঠান, তিনি সবসময়ই জীবাত্মা রূপে বুদ্ধিতে তিনি প্রতিবিম্বিত আছেন।

শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন সংস্কৃতি ও বেদ বেদান্তদর্শন প্রচারক,
সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, বাংলাদেশ।

জয় শ্রীকৃষ্ণ, জয় শ্রীরাম,
হর হর মহাদেব।

Post a Comment

0 Comments