Bablu Malakar

पवित्र वेद धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते

আদি পিতামাতা মনু ও শতরূপা সম্পর্ক কিভাবে?

 

আদি শক্তি পরমসত্ত্বার সগুন প্রকাশ হল ওঁ।

ব্রহ্ম + শক্তি সৃষ্টির পূর্বে এই দৃশ্যমান জগৎ একমাত্র অদ্বিতীয় আত্মা স্বরূপেই বর্তমান ছিল। নিমেষাদি ক্রিয়াযুক্ত অপর কিছুই ছিল না। সেই আত্মা চিন্তা করলেন-আমি লোকসমূহ সৃষ্টি করব।

               মনুসংহিতাতে

মনু হলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রকার ঋষি, যাকে পাঁচ সহস্রাধিক বছরব্যাপী প্রবহমান হিন্দুধর্ম শাস্ত্রমালার নেতৃস্থানীয় ও বিস্তৃতপ্রভাবক এবং মনুসংহিতার রচয়িতা হিসেবে পাওয়া যায়। মনুসংহিতা মতে ব্রহ্মার মানস পুত্র দশজন, যথা- মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, প্রচেতা, বশিষ্ট, ভৃগু ও নারদ।

পুরাণে এই কথা আছে যে,

ব্রহ্মার মানসপুত্রগণ এবং সনকাদি কুমারগণ প্রজা বৃদ্ধি করতে পারছে না দেখে ব্রহ্মা নিজ দেহকে দ্বিখণ্ডিত করলেন। স্বয়ং ব্রহ্মা নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত করে স্বয়ম্ভুব মনু ও শতরূপাকে সৃষ্টি করেছেন। দেহের এক খণ্ড থেকে মনু নামক পুরুষ এবং অপর খণ্ড থেকে শতরূপা নামক প্রকৃতি (নারী) জন্ম নিলেন। এই মনু ও শতরূপা থেকে প্রজাবৃদ্ধি হতে লাগল। ব্রহ্মার দেহ থেকে উৎপন্ন বলে মনুকে স্বায়ম্ভুব বলা হয়। স্বয়ং ব্রহ্মা নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত করে স্বয়ম্ভুব মনু ও শতরূপাকে সৃষ্টি করেছেন। ভগবত মতে স্বয়ম্ভুব মনুর ঔরসে এবং শতরূপার গর্ভে প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামক দুই পুত্রের এবং আকূতি, দেবাহূতি, ও প্রসূতি নামক তিন কন্যার জন্ম হয়। দ্বিতীয় মনু স্বরোচিষ হলেন অগ্নির পুত্র। তাঁর দুই পুত্রের নাম সুষেণ ও রোচিষ্মৎ।

            মনু ও শতরূপা সৃষ্টি

মনু ও শতরূপা এ জগতের সাধারণ মানুষের ন্যায় যোনিগতভাবে জন্মলাভ করেননি। তারা পতি-পত্নীরূপেই ব্রহ্মা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। আবার, মনু ও শতরূপা থেকে যদি মানবজাতির বিকাশ হয়।

যস্তু তত্র পুমান্‌ সোহভূন্মনুঃ স্বায়ম্ভুবঃ স্বরাট্‌ ।
স্ত্রী যাসীচ্ছতরূপাখ্যা মহিষ্যস্য মহাত্ননঃ ।।

            (ভাগবত, ৩/১২/৫৪)

অনুবাদঃ— তাঁহাদের মধ্যে যিনি পুরুষ তিনি স্বয়শম্ভুব মনু নামে পরিচিতি হন এবং যিনি স্ত্রী তিনি মহাত্মা মনুর মহিষী শতরূপা নামে পরিচিত হইয়াছিলেন।

এই শ্লোকে বর্ণনা আছে ব্রহ্মার শরীর থেকে যে দুজন সৃষ্টি হলেন তার মধ্যে যিনি পুরুষ তার নাম মনু আর যিনি স্ত্রী তার নাম শতরূপা। মনু এবং শতরূপা যদিও একজন পিতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে তবুও তারা ভাইবোন সম্পর্কে ছিলেন না। মনু এবং শতরূপা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং যৌন জীবনের মাধ্যমে প্রজা সৃষ্টি শুরু করেন।

মনু এবং শতরূপা থেকে বর্তমান মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে এই জন্যে মনুকে মানব জাতির পিতা এবং শতরূপাকে মানব জাতির মাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু পন্ডিত ব্যক্তি মনে করেন মনু থেকে মানুষ, মানব, ম্যান শব্দগুলি এসেছে।

একটি দেহ থেকে দুই ভাগে বিভক্ত হলো

তাভ্যাং রূপবিভাগাভ্যাং মিথুনং সমপদ্যত ।।

(ভাগবত, ৩/১২/৫৩)

অনুবাদঃ— একটি থেকে সদ্য বিভক্ত দেহ দুটি যৌন সম্পর্কের দ্বারা যুক্ত হয়েছিল।

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে একটি দেহ দুটি অংশে বিভক্ত হলেন এবং তারা যৌন সম্পর্কের সৃষ্টি করলেন আগে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মা সৃষ্টি বৃদ্ধির জন্য পুরুষের অর্ধাংশ থেকে মেয়ে সৃষ্টি করলেন।

আমি দেহ সৃষ্টির প্রথমে বলেছিলাম দুটি পদ্ধতিতে দেহ সৃষ্টি হয়। যৌন জীবন বহির্ভূত পদ্ধতি যা ইতিমধ্যে আলোচনা করা হল এবং যৌন জীবন পদ্ধতি। এখন যৌন জীবন পদ্ধতি আলোচনা করছি।

            যৌন জীবন পদ্ধতি

বর্তমান পৃথিবীতে আমরা প্রাণী সৃষ্টিতে এই পদ্ধতি দেখে থাকি। যৌন জীবনের মাধ্যমে বর্তমান পৃথিবীর প্রজা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই মনু ও শতরূপা থেকে যৌন জীবন শুরু হয়।

তদা মিথুনধর্মেণ প্রজা হ্যেধাম্বভূবিরে।

(ভাগবত, ৩/১২/৫৫)

অনুবাদঃ— সেই সময় থেকে মৈথুন ধর্মের দ্বারা প্রজাসমূহ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাইতে লাগল।

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে এই সময় হতে মৈথুন ধর্ম অর্থাৎ যৌন ধর্মের মাধ্যমে প্রজা বৃদ্ধি পেতে লাগল। এখানে মৈথুনকে ধর্ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বর্তমান সভ্যতা মনে করে যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করা জীবনের উদ্দেশ্য এটা বর্তমান সভ্যতার সবচেয়ে ভয়ংকর দিক। কিন্তু ভাগবত বলছে যৌন সঙ্গম শুধু মাত্র প্রজা বা সন্তান লাভের জন্য, একে উপভোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা সঠিক নয়। যৌন জীবন ভাগবতে অত্যন্ত সংযত অবস্থায় রাখতে বলেছে কারণ যৌন জীবন ভগবানের পথে অগ্রসর হওয়ার বাধা। মানুষের মধ্যে যে কামভাব আছে সেটা অত্যন্ত প্রবল সেটা অনেক সময় জ্ঞানী ব্যক্তিকেও পরাস্ত করে ফেলে। এই জন্য নির্জন স্থানে নিজের কন্যার সাথে অবস্থানকে নিষেধ করা হয়েছে।

নিজের কন্যার সাথে অবস্থান নিষিদ্ধ।

নন্বগ্নিঃ প্রমদা নাম ঘৃতকুম্ভসমঃ পুমান্‌ ।
সুতামপি রহো জহ্যাদন্যদা যাবদর্থকৃৎ ।।

(ভাগবত, ৭/১২/৯)

অনুবাদঃ— যুবতী স্ত্রী অগ্নির মতো এবং পুরুষ ঘৃতকুম্ভের মতো। তাই নিজের কন্যার সঙ্গেও নির্জনে অবস্থান করা উচিত নয়। তেমনই, অনির্জন স্থানে অন্য সময়ে যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকু তাহাদের সাথে সঙ্গ করা উচিত।

এই শ্লোকে নিজের কন্যার সাথে নির্জন স্থানে অবস্থান নিষেধ করা হয়েছে। এখানে স্ত্রীকে জলন্ত আগুন এবং পুরুষকে ঘি এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। আগুন এবং ঘি পাশাপাশি থাকলে উভয়ের মিলন হবে। বাবা মেয়ে মধ্যে যৌন সম্পর্কে ভাগবত এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

                 পরমাত্মা

ঈশ্বর সর্বব্যপী বিরাজিত তিনি উর্ধ্বে, চারপাশে সর্বদিকে বিদ্যমান সর্বব্যপী স্রষ্টা, যিনি আমাদের মধ্যেও ব্যক্তিত্বরূপে বিদ্যমান। ঈশ্বরই একমাত্র সকল ব্যষ্টিরের সমষ্টি-স্বরূপ; তথাপি তিনি ‘ব্যক্তি-বিশেষ’। যেমন মনুষ্যদেহ একটি বস্তু, ইহার প্রত্যেক কোষ একটি ব্যষ্টি; সমষ্টি—ঈশ্বর, ব্যষ্টি—জীব, সুতরাং দেহ যেমন কোষের উপর নির্ভর করে ঠিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও তেমনি জীবের অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে।

ঈশ্বর হিন্দু ধর্মের মূল। ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় তিনিই সব কিছুর নিয়ন্তা, তিনিই সর্ব শক্তিমান, তিনিই সর্বত্র রয়েছেন। তিনিই একমাত্র এই জগতের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং ধ্বংস কর্তা। তাঁর এই অনন্ত ভাব, অনন্ত তাঁর রূপ। জ্ঞানীর কাছে তিনি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম নিত্য, শুদ্ধ, মুক্ত, সর্বজ্ঞ, জ্যোতির্ময়, নিরাকার, সর্বব্যাপী ও সর্বশক্তিমান। এই ব্রহ্মই জীবদেহে আত্মা; আবার এ ব্রহ্ম যখন সবার উপর প্রভূত্ব করেন তখন তিনি হন ঈশ্বর বা পরমেশ্বর। ভক্তের কাছে তিনিই ভগবান। ভগবান গুণময়; তিনি অনন্তগুণ ও অশেষরূপের আধার। তিনি রসময়, আনন্দময়। ভগবানে মধ্যে ভক্ত তাঁর অভীষ্ট রূপ ও ভাব প্রত্যক্ষ করতে পারেন। ভগবান রূপ ধারণ করে ভক্তকে দেখা দেন, লীলা করেন। এই জীব ও জগৎ সৃষ্টির আদি কারণ ঈশ্বরকে জানা, নিজেকে জানার পাশাপাশি সৃষ্টিকে জানার ইচ্ছা ঔৎসুক্যও ভক্তের মনে জেগে ওঠে। আমাদের ধর্মগ্রন্থে সেই সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে।

ব্রহ্মাই প্রথম নারী ও পুরুষের সৃষ্টি করলেন। প্রথম সৃষ্ট পুরুষের নাম স্বায়ম্ভুব মনু, নারীর নাম শতরূপা। আমরা মনুর সন্তান বলে মানব নামে পরিচিত বলে জানা যায়।
স্বায়ম্ভুব মনু ও শতরূপার প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামে দুই পুত্র এবং আকুতি, দেবাহুতি ও প্রসূতি নামে তিন কন্যা জন্মগ্রহণ করেন তারপর পৃথিবীতে এলো মানুষ।

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের উপাসনায়, পূজায় মুখরিত হলো পৃথিবী, সৃষ্টির মধ্যেই স্রষ্টাকে পাইলে আমাদের সার্থকতা। স্রষ্টাকে জেনে সৃষ্টিও পাইলো পরম আনন্দ। স্রষ্টাকে পাবার জন্য তার অন্তরে জেগে রইলো অসীম আকুতি, সেই আকুতি থেকেই উপাসনা, পূজা, বন্দনা-সাধনা, আরাধনা প্রভৃতির উদ্ভব হল।

হিন্দুধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায়। জীবনে সৎ ও মহৎ হওয়া যায়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘ধারণাদ্ ধর্ম। অর্থাৎ যা কিছু ধারণ শক্তি সম্পন্ন তাই ধর্ম। কোন বস্ত্তর অস্তিত্ব সম্পর্কিত গুণসমূহই তার ধর্ম। যেমন-আগুনের ধর্ম দহন করা, জলের ধর্ম শীতলতা ইত্যাদি। আবার ধর্মের নিজের কোন রূপ বা পরিচয় নেই। এটি জলের ন্যায় পাত্রকে আশ্রয় করে থাকে। সুতরাং ধর্মের নিজের রূপ বা পরিচয় পাওয়া যায় ধার্মিকের মধ্যে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কতকগুলো সদ্গুণের অধিকারী হলে আমরা তাকে ধার্মিক বলি।

মনুসংহিতায় (৬/৯২) ধর্মের দশটি লক্ষণের উল্লেখ করা হয়েছে—

ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ।।

এর তাৎপর্য হচ্ছেঃ— ধর্মের রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় সেই ব্যক্তির মধ্যে যিনি সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, মনঃসংযম, চুরি না করা, পবিত্রতা, ইন্দ্রিয়দমন, বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্যনিষ্ঠা ও ক্রোধশূন্যতা প্রভৃতি গুণের অধিকারী যিনি তিনিই ধার্মিক, এরূপ ব্যক্তির মধ্যেই ধর্মের রূপ বা পরিচয় নিহিত। অতএব ধার্মিক ব্যক্তির এসব সদ্গুণই ধর্মের স্বরূপ। আবার শাস্ত্রে হিংসা না করা, চুরি না করা, সংযমী হওয়া, শুচি বা পবিত্র থাকা ও সত্যাশ্রয়ী হওয়া এই পাঁচটিকে মনুষ্যত্ব তথা মানব ধর্মের লক্ষণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

‘‘ঈশ্বর যিনি আমাদের সৃষ্টি করছেন তাকে আমরা বুঝতে পারি না, আমাদের অন্তঃকরণ তা বোঝার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়নি যে আমরা তাকে বুঝতে পারছি না তাই ঈশ্বর সম্পর্কে তার সৃষ্টির সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে বা খারাপ চিন্তা করতে আমরা দ্বিধাবোধ করি না।

ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি!

জয় শ্রীরাম
হর হর মহাদেব

                          শ্রী বাবলু মালাকার
                      (সনাতন ধর্মের প্রচারক)

Post a Comment

0 Comments