"অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় সূর্য ও চন্দ্র জ্যোতিশ্চক্রের অনুবর্তী হন।"
(লিঙ্গ পুরাণ, ৫৭ তম অধ্যায়)
ওম চন্দ্রমসে নমঃ
অমাবস্যা ও পূর্ণিমা কাকে বলে?
পূর্ণিমা ও অমাবস্যা দুটি সময় পর্যায়ের নাম যখন চাঁদ স্থিতির বিষয়টি বুঝানো হয়। পূর্ণিমা হলো যখন চাঁদ সর্বপ্রকাশ হয় এবং এটি সম্পূর্ণ দিকের চেয়ে উজ্জ্বল দেখা যায়। অমাবস্যা হলো যখন চাঁদ সম্পূর্ণভাবে অন্ধকার এবং দেখা যায় না। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা দুটি সময় পর্যায়ের নাম যখন চাঁদ স্থিতির বিষয়টি বুঝানো হয়। জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে, অমাবস্যা হচ্ছে চন্দ্রকলার প্রথম ধাপ। এটি মূলত সেই সময় যখন চাঁদ ও সূর্য একই বরাবর থাকে ফলে, পৃথিবী থেকে চাঁদকে তার কক্ষপথে দেখা যায় না, যদিও এই সময়টায় চাঁদকে খালি চোখে দেখা যায় না তবুও এই দশাটিতে চাঁদ খুব চিকন ক্রিসেন্টরূপে বিরাজমান থাকে কারণ, সূর্যগ্রহণ ছাড়া বাকী সময় চাঁদ সূর্যকে সরাসরি সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করে না। বিস্তারিত জানতে দেখুন চন্দ্রকলা।
পূর্ণিমা চন্দ্রের একটি কলা। এটি তখনই ঘটে যখন চাঁদ, পৃথিবীর যে পাশে সূর্য অবস্থিত তার ঠিক উল্টো পাশে অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চাঁদ এসময় সূর্য দ্বারা পূর্ণভাবে আলোকিত হয় যার ফলে একে একটি পূর্ণ গোলাকার চাকতি রুপে দেখা যায়। তবে এসময়ও প্রকৃতপক্ষে চাঁদের অর্ধেক অংশই আলোকিত হয় কারণ উল্টো দিকটি অনালোকিতই থেকে যায়। চন্দ্রমাস বলতে এক অমাবস্যা থেকে আর এক অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কালকে বুঝায়। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা হলো চাঁদের কক্ষপথের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। অমাবস্যা হলো চাঁদের কক্ষপথের সেই পর্যায় যখন চাঁদ পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝখানে থাকে। এই সময় চাঁদের আলো পৃথিবীতে পৌঁছায় না, ফলে চাঁদকে খালি চোখে দেখা যায় না। পূর্ণিমা হলো চাঁদের কক্ষপথের সেই পর্যায় যখন চাঁদ পৃথিবীর বিপরীত দিকে সূর্যের ঠিক বিপরীতে থাকে। এই সময় চাঁদের আলো পৃথিবীতে সম্পূর্ণভাবে পৌঁছায়, ফলে চাঁদকে সম্পূর্ণ গোলাকার আকারে দেখা যায়। অমাবস্যার পরের দিন থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কে কৃষ্ণপক্ষ বলা হয়। পূর্ণিমার পরের দিন থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কে শুক্লপক্ষ বলা হয়। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা দিনে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দুধর্মে অমাবস্যার দিন উপবাস করা এবং পূর্ণিমার দিন পূজা-অর্চনা করা হয়।
যত্বা সূর্য স্বর্ভানুস্তমসাবিধ্যদাসুরঃ।
অক্ষেত্রবিদ্যথামুগ্ধো ভুবনান্যদীধয়ুঃ।।
(ঋগ্বেদ, ৫/৪০/৫)
অর্থাৎ— হে সূর্য যাকে তুমি তোমার নিজ আলো উপহার স্বরূপ প্রদান করেছ (চাঁদ), তাঁর দ্বারা যখন তুমি আচ্ছাদিত হয়ে যাও, তখন আকস্মিক অন্ধকারে পৃথিবী ভীত হয়ে যায়।
ব্যাখ্যাঃ— যে চাঁদ সূর্যের আলোয় নিজে আলোকধারন করে সে নিজে যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে এক রেখায় এসে ছায়া তৈরী করে তখন অন্ধকারে ভূবন যেমন বিমোহিত হয়ে পড়ে (সূর্যগ্রহণ) ঠিক তেমনি যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে এক রেখায় এসে ছায়া তৈরী করে তখন অন্ধকারে ভূবন যেমন বিমোহিত হয়ে পড়ে (সূর্যগ্রহণ) ঠিক তেমনি যখন অজ্ঞানতার অন্ধকার জ্ঞানরুপ আলোকে ঢেকে ফেলে তখন আত্মা তার পথনির্দেশনা হারিয়ে ফেলে।
এখানে স্পষ্টত সূর্য গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ চন্দ্র, রাহু নয় তাও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
"সুষুম্ণঃ সূর্যরশ্মিশ্চন্দ্রমা গান্ধর্বস্তস্য"
(যজুর্বেদ, ১৮/৪০)।
অনুবাদঃ— ঈশ্বর সূর্যরশ্মিকে চন্দ্রের সাথে মিলিত করে একে আলোকিত করেন।
(যজুর্বেদ ১৮/৪০) নির্দেশ করে যে সূর্য চন্দ্রকে নিজ আলো প্রদান করে।
জ্যোতিষশাস্ত্র গ্রহলাঘব এর চন্দ্রগ্রহণাধিকার এর ৪ নং শ্লোকে বলা হয়েছে, “সূর্য গ্রহণের সময় সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে চাঁদ প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়, যার ফলে সূর্য গ্রহণ তৈরী হয়।সূর্য ও চন্দ্রের মাঝখানে যখন পৃথিবী প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায় ঠিক তখনই চন্দ্র গ্রহণ সৃষ্ট হয়।।”
আর্যভট্টও তাঁর আর্যভট্টীয় বই এর ৪র্থ অধ্যায় গোলাপাদ এর ৩৭ নং সূত্রে উল্লেখ করেন যে সূর্যগ্রহণ এর জন্য চাঁদ এর ছায়া এবং চন্দ্র গ্রহণের জন্য পৃথিবীর ছায়া ক্রিয়াশীল। তিনি ছিলেন কুসংস্কার বিরোধী, আর তাই তিনি তখনকার পৌরাণিকদের রোষানলে পড়েন। আর তাই তাঁর কর্ম তখন গৃহীত হয়নি। কিন্তু সত্যের উন্মোচন শুরু হয়েছে, আর তাই মিথ্যা অবশ্যই বিলুপ্ত হবে।
একটি মহাকাশীয় বস্তু দেখার সময়, যদি অপর একটি মহাকাশীয় বস্তুর তা আড়ালে চলে যায়, তখন গ্রহণ সংঘটিত হয়। এরূপ ঘটনা ঘটার সময়, একটি মহাকাশীয় বস্তুর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আড়ালে চলে যেতে পারে। যখন একটি মহাকাশীয় বস্তু সম্পূর্ণভাবে, অপর মহাকাশীয় বস্তুর আড়ালে চলে যায়, এবং তখন তৃতীয় মহাকাশীয় বস্তু থেকে তাকে পূর্ণগ্রাস বলা হয়। একইভাবে যদি মহাকাশীয় বস্তুটি যদি আংশিকভাবে আড়ালে চলে যায়, তখন তাকে আংশিক গ্রাস বা খণ্ডগ্রাস বলা হয়।
গ্রহণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয় তৃতীয় একটি মহাকাশীয় বস্তু থেকে। যেমন সূর্য, পৃথিবী এবং চন্দ্র নিয়ে যে গ্রহণ সংঘটিত হয়, তা পর্যবেক্ষণ করা হয় পৃথিবী থেকে। চন্দ্র, সূর্য, ও পৃথিবী নিয়েই শুধু গ্রহণের বিষয়টি ঘটে না। এর বেশির ভাগই সাধারণ মানুষের কাছে অজ্ঞাত থেকে যায়। পৃথিবীর সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে পরিচিত দুটি গ্রহণ হলো― সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ।
সৌরজগতে সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী, আবার পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে চন্দ্র। এই বিচিত্র আবর্তন চলার সময় কখনো কখনো সূর্য, পৃথিবী এবং চন্দ্র একই সরল রেখাতে অবস্থান নেয়। আর তখনই চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সৃষ্টি হয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চন্দ্রগ্রহণের চেয়ে সূর্যগ্রহণ বেশিবার হয়। প্রতি সাতটি গ্রহণের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের অনুপাত ৫:২ বা ৪:৩। এই আবর্তনের সূত্রে, যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চন্দ্র অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের দর্শন-সাপেক্ষে সূর্য চন্দ্র-এর পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং তখন সূর্যগ্রহণ ঘটে।
"সূর্যগ্রহণ"
এই সময় সূর্যের আলো চাঁদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে চাঁদের ছায়া পৃথিবীর উপর পড়ে। সূর্যের আকার অনেক বড় বলে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ পুরোপুরি ঢাকতে পারে না। বিশেষ করে চাঁদের চার পাশ দিয়ে সূর্যের ছটামণ্ডল ও বর্ণমণ্ডল উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়। এই অবস্থায় একে বলয়গ্রাস বলা হয়। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা থেকে সূর্যগ্রহণের পর্যায়কাল মাপার চেষ্টা শুরু করছিল। ১০০০ খ্রিষ্ট- পূর্বাব্দের দিকে গ্রহণের পূর্বাভাস মানুষ দিতে সক্ষম হয়। ঐ সময় জ্যোতিষীরা লক্ষ্য করেন যে, প্রতি ১৮ বছর ১০ দিন পরপর গ্রহণ পুনরাবর্তিত হয়। এই থেকে সারোস চক্র (পুনরাবৃত্তি চক্র) দিয়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণগুলি চিহ্নিত করার প্রথা চালু হয়।
"চন্দ্রপৃষ্ঠ"
চাঁদের ভূ-তত্ত্ব— চাঁদের সৃষ্টির পরপর, এর পৃষ্ঠ অনেক গরম ছিল এবং কোনো প্রকার গর্ত ছিল না। চাঁদে বিপুল পরিমাণে ধূমকেতু ও গ্রহানুর আঘাতে গর্তের সৃষ্টি হয়। এই সময়টি late heavy bombardment নামে পরিচিত।
চন্দ্র (সংস্কৃত: चन्द्र , অর্থ "জ্বলজ্বলে" বা "চাঁদ") হলেন একজন হিন্দু দেবতা, চাঁদের অধিপতি। তিনি সুদর্শন, সুপুরুষ, দ্বি-বাহুযুক্ত ও তার এক হাতে অস্ত্র ও অন্য হাতে পদ্ম রয়েছে। তিনি তার দশটি শ্বেত ঘোড়ার রথে চড়ে রাত্রে আকাশে উদিত হন৷ তিনি আরও অনেক নামে পরিচিত। যেমন:— সোম, ইন্দু (উজ্জ্বল বিন্দু), অত্রিসুত (অত্রির পুত্র), শচীন, তারাধিপতি (নক্ষত্রের প্রভু) ও নিশাকর (রাত নির্মাণকারী)। তার নামানুসারে সপ্তাহের একটি দিন হল সোমবার।
"চন্দ্রগ্রহণ"
আবার পৃথিবী যখন চন্দ্র ও সূর্য-এর মধ্যে চলে আসে, তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। সূর্য একটি তারা বলে তার আলো পৃথিবীতে বাধা পায় এবং চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। পৃথিবী চাঁদের চেয়ে বড় হওয়ায়, পৃথিবীর ছায়া চন্দ্রপৃষ্ঠকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। এই কারণে চন্দ্রগ্রহণ পৃথিবীর কোনো কোনো অংশে পূর্ণগ্রাস হিসাবে দেখা যায়। এই পূর্ণগ্রাস বা আংশিকগ্রাস পৃথিবীর সকল স্থান থেকে একই রকম দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীর সকল স্থানে কোনো না কোনো সময় পূর্ণ বা আংশিক গ্রহণ দেখা যায়। যখন এই সরলরেখায় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়ার জন্য চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, ফলে চাঁদকে তখন কিছু সময়ের জন্য দেখা যায় না। অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন একে সংক্ষেপে চন্দ্রগ্রহণ বলে।
বৈদিক পবিত্র বেদের জ্ঞান ও বৈদিক বিজ্ঞানের এই আশ্চর্য রহস্য ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে পবিত্র বেদের মহিমা ছড়িয়ে দিন সর্বত্র।
ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ
শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন ধর্মের সংস্কৃতি ও বেদ
বেদান্তদর্শন প্রচারক, বাংলাদেশ।
0 Comments
ওঁ তৎ সৎ
নমস্কার