Bablu Malakar

पवित्र वेद धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते

বৈদিক বর্ষচক্রের উৎপত্তি তত্ত্ব

সনাতন ধর্মের বৈদিক বর্ষচক্র চৈত্র (মধু) মাসে বসন্তকাল থেকে শুরু হয় তা পবিত্র বেদে বর্ণিত রয়েছে।

সনাতন ধর্মের মানবসভ্যতার ঊষাকালে এই ভারত ভূমিতে যে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল, তার তুলনা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। যে সভ্যতা পেশিশক্তির প্রভাবে নয় জ্ঞানশক্তির প্রভাবে বিকশিত হয়েছিল, যার সঠিক কাল নির্ধারণ করা এখন সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি, সমবেত মানুষের উন্মুক্ত জ্ঞানের উপলব্ধি থেকে এই সভ্যতার বিকাশ, তাই এই সভ্যতা অপৌরুষ সভ্যতা। যদিও এই সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে তেমন নাই, তবুও যেটা রয়ে গেছে এটাই অসীম আকাশের ন্যায়, যার নাম বৈদিক সাহিত্য। কিন্তু অনুতাপের বিষয় এইযে তার সামান্যতম অংশও আমরা বর্তমানে নিজের করে রাখতে পারিনি। তাই আমাদের সমাজ অতীতের ন্যায় উজ্জ্বল নয়। আজ থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে বৈদিক ঋষিরা উদাত্তকণ্ঠ বলে গেছেন। অনেকে হয়তো অবাক হতে পারেন, বৈদিক নববর্ষ আবার কী জিনিস! বৈদিক কাল গণনা, বছর গণনা কীভাবে হতো? এগুলোই আজকের আলোচ্য বিষয়।

সনাতন ধর্মের বৈদিক বর্ষের প্রথম মাস ছিল মধু অর্থাৎ চৈত্র। চৈত্র থেকে শুরু হত বসন্ত ঋতু এবং নতুন বছর। বর্তমান ভারতীয় ক্যালেন্ডারেও চৈত্র থেকেই নতুন বছর আরম্ভ হয়। প্রচলিত ভারতীয় ক্যালেন্ডারে সম্বৎ বা বর্ষ গণনা প্রারম্ভ হয় সাধারণত রাজা বিক্রমাদিত্যের সময় থেকে, যখন তিনি মধ্য এশিয় যাযাবর শক (Scythian) জাতির হাত থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করেন। এজন্য তা 'বিক্রম সম্বৎ" বলে বিখ্যাত। কিন্তু বিক্রম সম্বৎ ও মূলত বৈদিক বর্ষপঞ্জির সংস্করণ মাত্র। সনাতন ধর্মের বৈদিক বর্ষের বারো মাসের নামের কথা বলতে গেলে যজুর্বেদে বর্ণিত আছে যে, প্রথমেই আমরা দেখি বৈদিক মতে বারো মাসের নামঃ—

উপযামগৃহীতোহসি মধবে তোপয়ামগৃহীতোহসি মাধবায়
তোপয়ামগৃহীতোহসি শুক্ৰায় তোপয়ামগৃহীতোহসি শুচয়ে ত্বেপয়ামগৃহীতোহসি নভসে তোপয়ামগৃহীতোহসি নভস্যায় ভোপয়ামগৃহী-তেহসীষে দোপয়ামগৃহীতোহ সূর্জ কোপয়ামগৃহীতীতোহসি সহসে তোপয়ামগৃহীতোহসি সহস্যায় তোপয়ামগৃহী তোহসি তপসে তোপয়ামগৃহীতোহসি তপস্যায় দোপায়ামগৃহীহস্যংহসম্পতয়ে ৷৷
(শুক্লযজুর্বেদ, ৭/৩০)

অনুবাদঃ— (অধ্বর্যু তথা প্রতিস্থাতা ১২টি ঋতু গ্রহের দ্বারা হোম করবে। দুটি দুটি করে এই ছয়টি গ্রহের মধ্যে প্রথম মাসের গ্রহগুলির ক্ষেত্রে অধ্বর্যু এবং দ্বিতীয় মাসের গ্রহগুলির ক্ষেত্রে প্রতিস্থাতার অধিকার হবে)। হে ঋতুগ্রহ! = তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় মধু (চৈত্র) মাসের নিমিত্ত গ্রহণ করছি। (প্রতিপ্রস্থাতা বললেন- হে গ্ৰহ! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় মাধব (বৈশাখ) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে পাত্র! তুমি উপামের (গ্রহের) দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় শুক্র (জ্যৈষ্ঠ) মাসের নিমিত্ত গ্রহণ করছি। হে পাত্র! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি (প্রতিস্থাতা) তোমায় শুচিতার (আষাঢ়) জন্যে গ্রহণ করি। হে ঋতুগ্রহ। তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হও। আমি তোমায় নভস (শ্রাবণ) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি (অধ্বর্যু) তোমায় এই (আশ্বিন মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ!তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় ঊর্জ (কার্তিক) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত। আমি তোমায় সহস (অগ্রহায়ণ) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ! তুমি উপযামগ্রহের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় সহস্য (পৌষ) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় তপস (মাঘ) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় তপহম (ফাল্গুন) মাসের জন্যে গ্রহণ করছি। হে ঋতুগ্রহ! তুমি উপযামের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। আমি তোমায় পাপের স্বামী মলমাসের জন্যে গ্রহণ করছি৷

মধুশ্চমাধবশ্য বাসন্তিকাবৃতু অগ্নেরন্তঃশ্লেষোহসি কল্পেং দ্যাবাপৃথিবী কল্পশ্যামাপ ওয়াধয়ঃ কল্পন্তামগ্নয়ঃ পৃথম জ্যৈষ্ঠায় ব্রতাঃ।
যে অগ্নয়ঃ সমনসোন্তরা দ্যাবাপৃথিবী ইমে। বাসন্তিকাবৃতু অভিকল্পমানা ইন্দ্ৰমিব-দেবা অভিসংবিশন্তু তয়া দেবতয়াহঙ্গির প্রবে সীত৷৷
(শুক্লযজুর্বেদ, ১৩/২৫)

অনুবাদঃ— (ঋতবী সংজ্ঞক ইষ্টককে ধারণীয়)–চৈত্র-বৈশাখ মাসদ্বয় মিলে বসন্ত ঋতু হয়। হে বসন্ত ঋতু! তোমরা চিতিভাবকে প্রাপ্ত করাতে জ্ঞানশালী অগ্নির মধ্যে বিজাড়িতশালী হয়েছ। দ্যাবা পৃথিবীকে অনুকূল করো। জল ও ওষধিসমূহকে অনুকূল করো। আমাকে অর্থাৎ যজমানের জ্যেষ্ঠতার নিমিত্ত তার সমান (বা উপযুক্ত) কার্যশালী বিবিধ ইষ্টকা রূপ অগ্নিসমূহকে আমার অনুকূল করো। অন্য লোকেরও দ্বারা এই দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে সমান চিত্তে যে পৃথক্ বেদিসমূহ চয়ন করা হয়েছে। সেগুলিও এই বসন্ত ঋতুকে সম্পাদিত করতে আমাদের এই চয়ন কর্মে সমাহিত হয়ে যাক, যেমন, অন্য দেবসেবার নিমিত্ত ইন্দ্রকে সকলে আরও ঘিরে থাকে। হে ইষ্টকা! অগ্নি তোমার অধিপতি। সেই অগ্নিদেবের দ্বারা তুমি এই চিতিতে স্থাপিত হয়েছ; অঙ্গিরা ঋষির চয়নে যেভাবে স্থির হয়ে উপবেশন করেছিলে, আমাদেরও এই অগ্নিয়নে সেইভাবেই দৃঢ় হয়ে স্থিত হও।

শুক্লযজুর্বেদের উপর্যুক্ত মন্ত্রে যে বারো মাসের নাম পাওয়া যাচ্ছে তা ক্রমে মধু, মাধব, শুক্র, শুচি, নভ, নভস্য, ঈষ, ঊর্জ, সহ, সহস্য, তপ এবং তপস্য। কাঠক সংহিতাতেও এই বারো মাসের ও ষড়ঋতুর নাম পাওয়া যায়, যথাঃ—

"মধুশ্চ মাধবশ্চ বাসন্তিকা ঋতু শুক্রশ্চ শুচিশ্চ গ্রৈষ্মা ঋতু নভশ্চ নভস্যশ্চ বার্ষিকা ঋতু ঈষশ্চোর্জশ্চ শারদা ঋতু সহশ্চ সহস্যশ্চ হৈমন্তিকা ঋতু তপশ্চ তপস্যশ্চ শৈশিরা ঋতু।"
                          (কাঠক সংহিতা, ৩৫/৯)

মধু + মাধব = বসন্ত 
শুক্র + শুচি = গ্রীষ্ম
নভ + নভস্য = বর্ষা 
ঈষ + ঊর্জ = শরৎ
সহ + সহস্য = হেমন্ত
তপ + তপস্য = শিশির (শীত)

এই বৈদিক বর্ষপঞ্জির ভিত্তির কথা বলতে গেলে, আমরা সাধারণত দুই ধরণের ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, সৌর বর্ষ ও চান্দ্র বর্ষ।

বসন্ত ইন্নু রন্ত্যো গ্রীষ্ম ইন্নু রন্তাঃ।
বর্ষাণ্যনু শরদো হেমন্তঃ শিশির ইন্নু রন্ত্যঃ।।
(সামবেদ, ৬১৬)

অর্থাৎ— বসন্ত কালই রমণীয়, গ্রীষ্মও রমণীয়, বর্ষাকালের পরে শরৎ হেমন্ত ও শীতকালও রমণীয়।।

শুক্লযজুর্বেদ মন্ত্রে আরো অনেক কিছু তথ্য পাওয়া যায়ঃ—

(শুক্লযজুর্বেদ, ১৩/২৬) (অষাঢ়া নামক ইষ্টকা ধারণীয়)–হে ইষ্টকা! তুমি অষাঢ়া (অহনশীলা) নাম-সম্পন্না। তুমি শত্রুকে অভিভূতকারিণী। হে ইষ্টকা! তুমি আমাদের অদাতা তথা যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক শত্রুদের অভিভূত করো। তুমি সহস্র শক্তিশালিনী; অতএব তুমি আমাকে প্রসন্ন করো।

(শুক্লযজুর্বেদ, ১৩/২৭) ঋত (অর্থাৎ যজ্ঞ) কামনাকারী যজমানের নিমিত্ত বায়ু মধুর হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তার জন্য মধুর জল বাহিত হচ্ছে। আমাদের নির্মিত্ত ওষধিসমূহ মধুর হোক।

(শুক্লযজুর্বেদ, ১৩/২৮) আমাদের নিমিত্ত রাত্রি মধুর হোক, দিবা মধুর হোক, এই পার্থিব লোক আমাদের নির্মিত মাধুর্যযুক্ত থোক এবং আমাদের সকলের পালক দ্যুলোকও আমাদের নিমিত্ত মধুর হোক৷৷

(শুক্লযজুর্বেদ, ১৩/২৯) আমাদের নিমিত্ত পীপল প্রভৃতি বনস্পতি মধুর হোক। সূর্য আমাদের নিমিত্ত মধুর, হোক এবং আমাদের গাভীসমূহ আমাদের নিমিত্ত মধুর দুগ্ধ-ঘৃত প্রদানকারিণী হোক ৷৷

ঋগ্বেদ থেকে সনাতন ধর্মের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞান সম্পর্কে কিছু ধারণা করা যায়ঃ—
                              "বর্ষচক্র"

দ্বাদশ প্রধয়শ্চক্রমেকং ত্রীণি লভ্যানি। ক উ তচ্চিকেত।
তস্মানৎ সাকং ত্রিশতা ন শঙ্করোহর্পিতাঃ ষষ্ঠিন চলাচলাশঃ।
(ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/৪৮) 

অনুবাদঃ—  বর্ষচক্রে দ্বাদশ মাস অরের ন্যায় আবর্ত্তন করে। ইহার কেন্দ্র স্থলে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত এই তিন ঋর্তু রহিয়াছে। এই তত্ত্বকে কে জানে। বর্ষচক্রে ৩৬৫ দিন কীলকের ন্যায় স্থাপিত। ইহার ব্যতিক্রম ঘটে না। 

দ্বাদশ মাসকে বৈদিকগণ সমান ৩০ দিন করে বারটিভাগে ভাগ করেছিলেন তাই তখন বলা হত ৩৬০ (ত্রিশতা ষষ্ঠীঃ, মানে তিন শত ষাট দিন)। বৈদিক যুগের সময় পরিমাপক যন্ত্রের সাথে বর্তমান যন্ত্রগুলো মিল নেই তাই এরুপ। কিন্তু আধুনিক নিয়মে এই ১২ মাসকে ৩৬৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

                              "অহোরাত্র"

দ্বাদশারং ন হি তর্জ্জরায় বর্বতি চক্রং পরিদ্যা মৃতস্য।
আ পুত্রা অগ্নে মিথুনাসো অত্র সপ্ত শতানি বিংশতি শ্চ স্থূতঃ।।
(ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/১১)

অনুবাদঃ—  সত্য স্বরুপ কালের সম্বৎসর চক্র আকাশের চারিদিকে পরিভ্রমণ করিতেছে। তাহাতে দ্বাদশটী অর আছে, তাহা কখনও জীর্ণ হয় না। হে পরমাত্মান্! তোমার রচনা অদ্ভুত। এই চক্রে ৩৬৫ দিন ও ৩৬৫ রাত্রি ৭২০ পুত্রের ন্যায় বেষ্টন করিয়া অবস্থান করিতেছে।

৩৬৫ দিনে বছর ও ৩০ দিনে মাস গণনা প্রথম কোথায় শুরু ও কারা শুরু করেন?

বর্তমানে লেখাপড়ার জোরে আমরা জানি মিশরীয়রা প্রথম ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু করে। কিন্তু মিশরীয় সভ্যতার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০০ খ্রি.পূ। আর বেদ লিখিত রূপ পায় খ্রিষ্টের জন্মেরও ৪০০০ হাজার বছর পূর্বে, এমনকি সকলে জানি লিখিত হওয়ার পূর্বে সেগুলো মুখে মুখে প্রচলিত ছিল অর্থ্যাৎ ঘটনা আরও প্রাচীন।

সনাতন ধর্মের বৈদিক ঋষিরা প্রথম চন্দ্র ও সৌর বছরকে সমন্বয় করে ৩৬৫ দিনে বছর ও ৩০ দিনে মাস গণনার সূত্রপাত করেন।

ওঁ বেদ মাসো ধৃতব্রত দ্বাদশ প্রজাবতঃ।
বেদ য উপজ্ঞায়তে।
                     (ঋগ্বেদ, ১/২৫/৮)

অনুবাদঃ— যিনি ধৃতব্রত হয়ে স্ব স্ব ফলোপাদী-দ্বাদশ মাস জানেন, তিনি ত্রয়োদশ মাস উৎপন্ন হয়, এ তথ্যও বিদিত আছেন।

৩৬৫ দিনে সৌর বছর আর ৩৫৫ দিনে চন্দ্রবৎসর। দুটির মধ্যে ১০ দিনের পার্থক্য। আর একারণে প্রতি ৩ বছর অন্তর একমাসের ব্যবধান তৈরি হয় সৌর ও চন্দ্র বছরের মধ্যে। আর সেকারণে দুটোর সমন্বয় করতে হলে প্রতি তৃতীয় বছর বারো মাসের পরিবর্তে চন্দ্রবছর তেরো মাস ধরতে হয়। এই ত্রয়োদশ মাসটিকে 'মল্লিম্লুচ্চ' বা মলমাস বলা হয়। (অর্থাৎ ১ টি অতিরিক্ত ১৩ তম মাসের কথা বলা হচ্ছে)। সৌর বৎসর অপেক্ষা চান্দ্র বৎসরে কয়েকটা দিন কম হয়। এ জন্য সৌর বৎসর ও চান্দ্র বৎসরের ঐক্য বিধানার্থে চান্দ্র বৎসর গণনায় প্রতি তিন বৎসরে একটি অধিক মাস (মলমাস) যোগ করতে হয়।

উপরোক্ত (ঋগ্বেদ, ১/২৫/৮) থেকে এটা বোঝা যায় যে, বৈদিক সনাতন উভয় বৎসরের গণনা যেমন জানতেন তেমন উভয় বৎসরের মধ্যে ঐক্য বিধান করতেও জানতেন। সনাতন ধর্মের তথ্য অনুসারে বর্তমান সনাতন ধর্মের ক্যালেন্ডারেও পুরুষোত্তম মাস বলে অতিরিক্ত মাস যোগ করা হয় যাকে আমরা মল মাস বলে চিনি। এরপরেও প্রতি চল্লিশ বছর পর পর একটি করে অতিরিক্ত মাস বর্জন করা হত, যার ফলে ৩৬৫.২৫ দিনে এক বৎসর হত। এই পরিত্যক্ত মাস মার্তও নামে পরিচিত ছিল।

অর্থাৎ ৪০ বছরের সময়সীমা দাড়ায় ৩০ × ১২ = ৩৬০ দিন।
এবং ৩৬০ × ৪০ = ১৪৪০০ দিন অতিরিক্ত মাস প্রতি ৫ বছরে ১টি অর্থাৎ ৪০ বছরে ৮টি অতিরিক্ত মাস তথা ৮ × ৩০ = ২৪০ দিন যুক্ত হচ্ছে আবার সাথে ১ মাস অর্থাৎ ৩০ দিন পরিত্যক্ত হচ্ছে। অতএব ৪০ বছরে মোট দিন সংখ্যা ১৪৪০০ + ২৪০ = ১৪৬৪০ তারপর ১৪৬৪০ – ৩০ = ১৪৬১০ তাহলে প্রতি বছরে দিন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪৬১০ ÷ ৪০ = ৩৬৫.২৫ দিন যা কাঁটায় কাঁটায় আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর একবার ঘূর্ণনের সময়কালের প্রায় সমান।

পবিত্র বেদে বর্ষবরণের লক্ষ্যের বলা হয়েছে—

সম্বৎসরোসি পরিবৎসরোহসীদাবৎ সরোহসভদ্ধসরোহসি বৎসরোহসি । 
উষসস্তে কল্পন্তামহোরাত্রাস্তে কল্পন্তমর্দ্ধমাসাস্তে কল্পান্তাং মাসাস্তে কল্পন্তামৃতবস্তে কল্পস্তাং সম্বৎ সরম্ভে কল্পতাম্। 
প্রেত্যাহ এতৈ সং চাঞ্চ প্ৰ চ সারায়। 
সুপর্ণচিদসি তয়া দেবতয়াঙ্গিরস্বদ ধ্রুবঃ সীদ।।
(যজুর্বেদ ২৭/৪৫ )

অর্থাৎ— হে অগ্নি! তুমি সম্বৎসর (পূর্ণ বৎসর); তুমি পরিবৎসর (সম্বৎসর পঞ্চকের অন্তর্গত বৎসরবিশেষ); তুমি ইদাবৎসর; তুমি ইদ্বৎসর; ও বৎসর। (অর্থাৎ তুমি জ্যোতিঃশাস্ত্রোক্ত পঞ্চসম্বৎসরাত্মক যুগরূপ)। উষাসমূহ তোমার অবয়ব কল্পিত করুক। দিবা-রাত্রি তোমার কাল-অবয়ব কল্পিত করুক। অর্ধমাস ও মাস তোমাকে অবয়বীভাবের দ্বারা কল্পিত করুক। ঋতুসমূহ তোমাকে কল্পিত করুক। সম্বৎসর তোমাকে কল্পিত করুক। মরণের নিমিত্ত এবং জন্ম গ্রহণের নিমিত্ত তুমি সংকোচন ও বিস্তারণ করো এবং স্বয়ং (নিজেকে) প্রসরিত করো। হে অগ্নি! তুমি সুপর্ণচিতি হও। সেই সুপর্ণ (সূর্য) দেবতার দ্বারা অনুজ্ঞাত হয়ে তুমি অঙ্গিরা ঋষির যজ্ঞের ন্যায় আমাদেরও যজ্ঞে স্থিরভাবে স্থির হও।

এখানে বলা হয়েছে— হে মনুষ্য তোমরা সংবৎসরের তুল্য নিয়মে বর্তমান হও, ত্যজ্য বছরের সমান দুরাচরণ ত্যাগী হও, নিশ্চয় করে উত্তম প্রকার বর্তমান বছরের তুল্য হও, নিশ্চিত সংবৎসরের সদৃশ্য হও, বর্ষের সমান হও, তোমাদের জন্য কল্যাণকারী ঊষা প্রভাতবেলা সমর্থ হোক, তোমাদের জন্য দিন-রাত্রী মঙ্গলদায়ক হোক, তোমাদের জন্য শুক্ল-কৃষ্ণপক্ষ সমর্থ হোক, তোমাদের জন্য চৈত্র আদি মাস সমর্থ হোক, তোমাদের জন্য বসন্তাদি ঋতু সমর্থ হোক, তোমাদের জন্য সংবৎসর সমর্থ হোক, এবং তোমরা উত্তম প্রাপ্তির জন্য সম্যক প্রাপ্ত হও, এবং তোমরা উত্তম প্রকার গমণের জন্য আপন প্রভাবের বিস্তার করো, যেই কারণে তোমরা সুন্দর রক্ষার সাধনের সঞ্চয়কর্তা, ইহা দ্বারা সেই উত্তম গুণযুক্ত সময়রূপ দেবতার সাথে সুত্রাত্মা প্রাণবায়ুর সমান দৃঢ় নিশ্চল স্থির হও।

শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন সংস্কৃতি ও বেদ বেদান্তদর্শন প্রচারক,
সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, বাংলাদেশ।

Post a Comment

0 Comments