এই পৃথিবীতে এই প্রকৃতিতে প্রতিটি বস্তুরই একটি নিজস্ব ধর্ম আছে। যেমন- পানির ধর্ম নিচের দিকে গড়ানো। আগুনের ধর্ম পুড়িয়ে ফেলা। ঠিক তেমনি মানুষেরও ধর্ম আছে। মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা ও মনুষ্যত্ব এর চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই। সকল ধর্মের মূল শিক্ষা হল মানবতা আর মানবতাই হল মানব ধর্ম বা প্রেম ধর্ম বা ঈশ্বর ধর্ম। তাই প্রকৃত সাধক বা মানবতাবাদী মানুষ বা ঈশ্বর প্রেমীদের মধ্যে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব থাকে না। মনুষ্যত্ব এই মনুষ্যত্ব মানুষকে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয় আর সে জ্ঞান হচ্ছে বেদ বেদান্তদর্শন। এই বেদ বেদান্তদর্শন হচ্ছে একটি জ্ঞানের ভান্ডার। এই জ্ঞানের ভান্ডার থেকে মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য আমরা সারা জীবন সাধনা করে থাকি। মনুষ্যত্ব ও ধর্মহীন মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট বয়ে আনে। সেজন্যই পৃথিবীতে সুখ এবং শান্তি লাভের উদ্দেশ্য সফল করতে প্রত্যেক মানুষকেই ধর্মের জ্ঞান লাভ করতে হবে। ধর্মের জ্ঞানের ধর্মানুভূতির মধ্য দিয়েই মানুষ সহজাত প্রবৃত্তিগুলোকে লাভ করে, যেমন কোমলতা, গভীরতা, মধুরতা, ব্যাপকতা ও অন্তদৃষ্টি। সনাতন ধর্মটি যথাৰ্থ যেখানে জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে তাই তোমার জন্মতেই ধর্ম একটা, ধর্ম মূলত সনাতন। কিন্তু যারা নিজের ব্যক্তিগত মতবাদকে ধর্ম রূপান্তর ঘটাতে বা করতে গিয়ে এর বহু রূপ করেছে, সেই রূপ অনুযায়ী মানুষও নিজেদেরকে ভিন্ন ধর্মের সাথে নিজেকে যুক্ত করে বা বিভক্ত হয় এটা করা খুবই খারাপ। যে ধর্মগুলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক মানুষের তৈরি যেমনঃ— ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য ধর্ম।
যারা অন্যের মতবাদকে ধর্ম বলে মনে করে সত্য সনাতন ধর্মকে পরিত্যাগ করে নিজেকে যুক্ত করেন তাঁদের জন্য গীতা ও মহাভারত বনপর্বে বলা হয়েছে—
শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্ঠিতাৎ৷
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ৷৷
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা, ৩/৩৫)
অর্থাৎ— "নিজ ধর্মের অনুষ্ঠান দোষযুক্ত হলেও উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত আপাত দৃশ্যমান পরধর্ম থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই নিজধর্ম সাধনে যদি মৃত্যুও হয়, তবেও সে ধর্ম কল্যাণকর; কিন্তু পক্ষান্তরে পরধর্ম ভয়াবহ।"
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা, ৩/৩৫) মূলত এখানে বলা হয়েছে— নিজের ধর্ম কিঞ্চিদ্দোষবিশিষ্ট হইলেও উহা উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্মাপেক্ষা থেকেও নিজের ধর্ম শ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকর, কিন্তু পরধর্ম গ্রহণ করা খুব বিপজ্জনক।
ধর্ম এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ।
তস্মাদ্ধর্মং ন ত্যজামি মা নো ধর্মো হতো বধীৎ ।।
(মহাভারত: বনপর্ব, ২৬৭/৯২)
“যে ব্যক্তি ধর্ম নষ্ট করে, ধর্মই তাকে সমূলে বিনষ্ট করে দেয়। পক্ষান্তরে যিনি ধর্মকে রক্ষা করেন, ধর্মই তাকে সর্বদা রক্ষা করেন। তাই আমি (ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির) ধর্মকে কখনও পরিত্যাগ করি না। কেন না, ধর্ম যদি আমার দ্বারা বিনষ্ট হয়, তবে সে ধর্মই আমাকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে দিবে।”
যারা মনে করেন—
ধর্ম যার যার উৎসব সবার কথাটি কিন্তু এমন নয়,
তোমার ধর্ম, উৎসবও তোমার।
তোমার শুধু ধর্মীয় কার্য ধর্মের কর্তব্যগুলো পালন করলেই প্রকৃতপক্ষে ধার্মিক হওয়া যায় না, ধর্ম রক্ষা করাই হলো একজন প্রকৃতপক্ষের ধার্মিকের কাজ যে ধর্ম পালন ও ধর্ম রক্ষা করেন তাকে ধার্মিক বলে।
ধর্ম রক্ষা—
ধর্ম এব হতো হন্তি,
ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ ||
ধর্মকে যদি তুমি রক্ষা করো, তবে ধর্মই তোমাকে সকল দিক থেকে রক্ষা করবে, পক্ষান্তরে যদি তুমি ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাও, তবে ধর্মই তোমাকে নির্মমভাবে বিনাশ করবে।
মহাভারত বনপর্ব (৩১২/১২৮)
ধর্ম প্রচার—
ধর্ম হতেই অর্থ এবং প্রভাব আসে, ধর্ম থেকেই সুখ উৎপন্ন হয়। ধর্মের দ্বারাই জগতে সকল অভীষ্ট বস্তুর লাভ হয়; সুতরাং এ জগতে ধর্মই প্রকৃত সারবস্তু। তাই সকলেরই ধর্মের শরণে থাকার সর্বদা চেষ্টা করা উচিত।
(অরণকাণ্ড, ৯/৩০)
ধর্মের জয় হোক, অধর্মের নাশ হোক, সনাতন ধর্ম রক্ষা হোক। ধর্মকে রক্ষা করুন, ধর্মকে বুকে ধারন করুন, আপনার সন্তানকে ছোট থেকেই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করুন।
শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন সংস্কৃতি ও বেদ
বেদান্তদর্শন প্রচারক, বাংলাদেশ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ, জয় শ্রীরাম,
হর হর মহাদেব 🙏
0 Comments
ওঁ তৎ সৎ
নমস্কার