Bablu Malakar

पवित्र वेद धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते

ঈশ্বরের জগৎকারণতার ব্যাখ্যা


এই বিশ্বজগত ঈশ্বরের নিয়ন্ত্র তাই সনাতন সংস্কৃতি মতে সনাতন একেশ্বরবাদী চিন্তাধারায় রয়েছেন, ঈশ্বরকে সর্বোচ্চ সত্তা, সনাতন ধর্ম ঈশ্বরকে আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের প্রধান উপাস্য হিসাবে কল্পনা করেন। ঈশ্বর সাধারণত সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বত্র বিরাজমান ও সার্বজনীন হিসাবে ধারণা হয় সেইসাথে তিনি অনন্ত এবং প্রয়োজনীয় অস্তিত্ব থাকেন। ঈশ্বরকে প্রায়শই উৎকর্ষ বা অব্যবস্থা ধারণার সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিরাকার। যিনি নিরাকার তিনি সাকার হতে পারেন কারণ ঈশ্বর সর্বশক্তিমান।

শক্তিদ্বয়বৎ- অজ্ঞান-উপহিতং চৈতন্যং স্বপ্রধানতয়া নিমিত্তং।
স্ব-উপাধি-প্রধানতয়া উপাদানং চ ভবতি।।
              (বেদান্তসার, ৫৫)

[এই] শক্তিদ্বয়যুক্ত [আবরণ ও বিক্ষেপ] অজ্ঞান উপহিত চৈতন্যকে প্রধানরূপে ধরলে (জগতের) নিমিত্ত-কারণ এবং নিজ উপাধিকে প্রধানরূপে ধরলে উপাদান-কারণ হন।

অমৃত টীকাঃ— প্রশ্ন হতে পারে, আত্মা অবিকারী, তিনি জগতের কারণ কি না? যদি জগৎ কারণ হন তবে, তিনি নিমিত্ত-কারণ অথবা উপাদান- কারণ? যে-কোন কার্যের দুইটি কারণ থাকে। একটি নিমিত্ত-কারণ অন্যটি উপাদান-কারণ। যে কারণটি কার্যের সঙ্গে যুক্ত, তাকে উপাদান-কারণ আর যেটি কার্যের সঙ্গে যুক্ত না থেকে কার্য উৎপাদনে সহায়তা করে, তাকে বলে নিমিত্ত-কারণ। যেমন মাটি ঘটরূপ কার্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে বলে মাটি ঘটের উপাদান-কারণ। কুম্ভকার, চাকা, দণ্ড প্রভৃতি ঘট উৎপাদনে সহায়ক হলেও ঘটের সঙ্গে এদের যুক্ত দেখা যায় না। এ সকল কারণকে নিমিত্ত-কারণ বলে। এখন কথা হলোঃ—

                   ঈশ্বর জগতের কোন্ কারণ?
উত্তরঃ— ঈশ্বর জগতের অভিন্ন-নিমিত্ত ও উপাদান-কারণ।

যথা লুতা তন্তুকার্যং প্রতি, স্বপ্রধানতয়া নিমিত্তং, স্ব-শরীর- প্রধানতয়া উপাদানং চ ভবতি।।
                      (বেদান্তসার, ৫৬)

যেমন, মাকড়সা তার জালরূপকার্যে নিজে (চেতন) প্রধানরূপে নিমিত্ত- কারণ আর নিজশরীরকে প্রধান ধরে উপাদান-কারণ হয়।

অমৃত টীকাঃ— কেমন করে একসঙ্গে নিমিত্ত ও উপাদান কারণ হতে পারে? এরই উত্তরে মাকড়সার দৃষ্টান্ত। মাকড়সার চৈতন্যকে অর্থাৎ তার ইচ্ছাশক্তিকে প্রধানভাবে ধরলে মাকড়সা তার জাল রচনার নিমিত্ত-কারণ হয় আর মাকড়সার জালের উপাদান তার নিজ শরীরের লালা। অতএব, মাকড়সার শরীরকে প্রধান করে ধরলে, যেমন মাকড়সা, একই শরীরে উপাদান-কারণও হয়। সেরূপ সমষ্টি অজ্ঞান উপাধিকে প্রধান করে ধরলে, ঈশ্বর হন জগতের উপাদান-কারণ আবার অজ্ঞান উপহিত চৈতন্যকে প্রধান করে ধরলে, তিনিই হন নিমিত্ত-কারণ।

এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, উপনিষদে বলা হয়েছে 'তৎ সৃষ্টা তদেবানুপ্রাবিশৎ'-জগৎ সৃষ্টি করে তিনি জগতে অনুপ্রবিষ্ট হলেন- [তৈঃ ২।৬।১]। তবে তিনি নিমিত্ত-কারণ হতে পারেন না। কারণ নিমিত্ত-কারণ কার্যে অনুপ্রবিষ্ট হতে পারে না। আবার তিনি উপাদান-কারণও হতে পারেন না। কারণ, উপাদান-কারণটির ধর্ম কার্যেও থাকবে, যেমন মাটি ঘটেও থাকে। মাটির ধর্ম ঘটেও থাকবে। তাহলে ব্রহ্ম চেতন, নিত্য, শুদ্ধ, নিরবয়ব, অসীম-তা থেকে উৎপন্ন জগৎও সেরূপ নিত্যশুদ্ধ নিরবয়ব অসীম হবে, কিন্তু তা নয়। জগৎ অনিত্য, অশুদ্ধ, সাবয়ব, সসীম। অতএব জগৎকারণ ব্রহ্মহ্ম হতে পারেন না।

এর উত্তরে বলা হয়েছে, যেমন চুম্বকের সম্মুখে জড় লোহাকেও নড়তে দেখা যায়, তেমনি মায়াশক্তি জড় হলেও চৈতন্য স্পর্শে জগৎরূপে পরিণত হয়। মায়ার অধীশ্বর মায়াবী ঈশ্বর বলে পরম্পরাক্রমে ঈশ্বরকে গৌণভাবে উপাদান-কারণ বলাতে অসঙ্গতি কিছু নাই। আর অজ্ঞানের এই বিকারের প্রতি চৈতন্যের এই প্রভাবকে নিমিত্ত-কারণরূপে বলা হয়েছে। চৈতন্যের প্রভাবেই সৃষ্টিকার্যে মায়োপহিত ব্রহ্মের ইচ্ছার উদ্রেক। সুতরাং ঈশ্বর নিমিত্ত-কারণ। আর যে বলা হয়েছে, তৎ সৃষ্ট ইত্যাদি-তা উপাদান-কারণবিষয়ক বলে নিমিত্ত-কারণ হতে পারেন না, একথা বলাও ব্যর্থ হয়।

ঈশ্বর উপাদান-কারণ হলে জগতের নিত্যত্ব প্রভৃতি যে সকল আক্ষেপ করা হয়েছিল তার উত্তরে বলা যায়, পরিণামী কার্যের ক্ষেত্রেই কারণগুলি কার্যে অনুবর্তন করে। কিন্তু বিবর্ত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তদ্রূপ কোন নিয়ম নেই। পরিণামী সৃষ্টি হলো, যেমন দুধ পরিণাম প্রাপ্ত হয়ে দই হয় অর্থাৎ বস্তুর স্বরূপ পালটে যায়। বা সোনার তাল পরিণাম প্রাপ্ত হয়ে হার কেয়ূর ইত্যাদি রূপ পায়। এক্ষেত্রে সোনা সোনাই থাকে বটে কিন্তু, নাম রূপ পিণ্ড ধর্ম পালটে যায়। কিন্তু বিবর্তসৃষ্টিতে তা হয় না। উদাহরণ, যেমন ভ্রমস্থলে, রজ্জুতে সর্প দেখাটা ভ্রমমাত্র। ব্রহ্ম জগৎ সৃষ্টির প্রতি বিবর্ত অধিষ্ঠান বলে আকাশাদি জগৎ প্রপঞ্চ মায়াকার্য, মায়ার পরিণাম, কিন্তু ব্রহ্মের 'বিবর্ত। সুতরাং ব্রহ্ম-ধর্ম জগতে অনুবর্তন করবে না, বরং মায়ার ধর্ম অনিত্যত্ব, অশুদ্ধত্ব, সসীমত্ব, সাবয়বত্বাদি জগতে দেখা যায়। এখন মায়ার আশ্রয় ব্রহ্ম বলে, আর মায়ার ব্রহ্মভিন্ন পারমার্থিক সত্তা না থাকায় ভ্রমস্থলে সর্পের উপাদান যেমন দড়িই, তেমনি ব্রহ্মই জগতের অভিন্ন নিমিত্তোপাদান-কারণ।

তাহলেও প্রশ্ন উঠবে, মায়া যখন মিথ্যা, তখন বন্ধন-মুক্তিও মিথ্যা, মিথ্যা শাস্ত্র আলোচনা, ইত্যাদি? এর উত্তর হলো, ঠিকই তো। এটা বোঝার জন্যই তো সাধন-ভজন, শাস্ত্রপাঠ, আলোচনা ইত্যাদি।

তাহলে মাকড়সার ভিতরে যদি চৈতন্য না থাকত তবে, যেমন মৃত মাকড়সার দেহ থেকে লালা দিয়ে জাল তৈরির ইচ্ছা বা কার্য সম্ভব হতো না, তেমনি অজ্ঞানের আশ্রয় চৈতন্য না থাকলে জগৎ রচনার সঙ্কল্প বা মায়ার পরিণামপ্রাপ্তিও হতো না। একেই বলা হচ্ছে, চৈতন্যকে প্রধানভাবে ধরলে ঈশ্বর জগৎরচনার নিমিত্ত-কারণ আর তার সঙ্গে অভিন্ন মায়া শক্তিকে প্রধান করে ধরলে তিনিই মায়ার দ্বারে জগতের উপাদান-কারণ হন। তাই ব্রহ্মহ্মই জগতের অভিন্ন নিমিত্ত-উপাদান-কারণ।

ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ

শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন সংস্কৃতি ও বেদ বেদান্তদর্শন প্রচারক,
সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।

জয় শ্রীকৃষ্ণ, জয় শ্রীরাম,
হর হর মহাদেব।

Post a Comment

0 Comments