শ্রী হনুমান শ্রীরামচন্দ্রের সহযোগি বিশেষ বার্তাদূত (রামায়ণ, পবননন্দন) বৃহদাকার কৃষ্ণমুখ বানর। অমরকোষ বাংলা অভিধান থেকে হনুমান শব্দের অর্থ এবং উদাহরণ সমার্থক শব্দ এবং বিপরীতশব্দ সহ অর্থঃ— পবনের পুত্র যিনি খুব বলশালী, শক্তিশালী এবং যাকে অমর মনে করা হয়। পবনের পুত্র হনুমান যিনি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অমর বলে বিবেচিত। হনুমান ছিলেন রামের ভক্ত। অঞ্জনসুত, অঞ্জনী নন্দন, অঞ্জনিনন্দন, অনিলকুমার, অনিলাত্মজ, অঞ্জনেয়া, অঞ্জনেয়া, অনিল, ইরাজ, কপিন্দ্র, কপিন্দ্র, কপিশ, কপিস, কেশরিনন্দন, কেশরিনন্দন, পবন তনয়, পবনকুমার, পবনপুত্র, পবনসুত, প্রভঞ্জন-সম্মান বজরং বালি, মহাবীর, মহাবীর, মারুতাত্মাজ, মারুতি, যোগচর, ল্যাংদো, বজ্রকঙ্কট, বত-পুত্র, বতজাত, বতপুত্র, বৈতাত্মাজ, হনুমন্ত, হনুমন্ত, হনুমান, হনু, হরিশ।
অপর একটি সূত্র বলে হনুমান নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ হন ("হত্যা") এবং মানা ("গর্ব") থেকে। অর্থাৎ হনুমান অর্থ "যাঁর গর্ব হত হয়েছে"। কিছু জৈনগ্রন্থ মতে হনুমান তার শৈশব হনুরাহা'তে কাটিয়েছেন এবং তাই তার নাম হনুমান। হনুমান তিনি তার ভগবান রামের প্রতি "প্রেমময়, মানসিক ভক্তি" সহ "শক্তি, বীরত্বপূর্ণ উদ্যোগ এবং দৃঢ়তার শ্রেষ্ঠত্ব" এর সংমিশ্রণকে প্রতিফলিত করেছেন, যা শক্তি ও ভক্তি উভয়েরই মূর্ত প্রতীক।
In Hinduism, the monkey god and helper of Rama. God of devotion and courage. Hanuman, also known as Maruti, Bajrangabali, and Anjaneya, is a deity in Hinduism, revered as a divine vanara, and a devoted companion of the deity Rama. Central to the Ramayana, Hanuman is celebrated for his unwavering devotion to Rama and is considered a chiranjivi. He is traditionally believed to be the spiritual offspring of the wind deity Vayu, who is said to have played a significant role in his birth. In Shaiva tradition, he is regarded to be an incarnation of Shiva, while in most of the Vaishnava traditions he is the son and incarnation of Vayu. His tales are recounted not only in the Ramayana but also in the Mahabharata and various Puranas.
হনুমান জী শ্রীরামচন্দ্রের সহযোগি বিশেষ বার্তাদূত যার রয়েছে অসীম জ্ঞান, শক্তি, সাহস, ভক্তি ও আত্ম-শৃঙ্খলার। হনুমানজি শিবের অবতার কিন্তু তিনি বিষ্ণুর অবতার রামের লীলাসঙ্গী। অপূর্ব তাঁর জীবন, অপূ্র্ব তাঁর কর্ম। মহর্ষি বেদব্যাস প্রস্তাবিত অঞ্জনাদ্রি পাহাড় তিরুমালার হনুমানের জন্মস্থান। ভগবান হনুমান জী আমাদের হিন্দুধর্মের একজন ভগবান, ভগবান হনুমান হলেন জ্ঞান, শক্তি, সাহস, ভক্তি ও আত্ম-শৃঙ্খলার ভগবান তাঁর ভক্তি শক্তি এবং জ্ঞানের জন্য পরিচিত। ভগবান হনুমান জী ছিলেন রুদ্র অবতার। বলা হয় একদা দশানন রাবণ কৈলাশে দ্বার পাহাড়ায় রত নন্দী কে ব্যাঙ্গ করলে, ক্ষিপ্ত হয়ে নন্দী রাবণকে অভিশাপ দিলেন- ‘নর আর বানরের হাতেই রাবণ আর তার কূল ধ্বংস হবে।’ রাক্ষস বাহিনীর অত্যাচার থেকে ধরিত্রী কে মুক্ত করতে, তথা ভগবান রামের সেবা ও রাম নাম প্রচারের জন্যই রুদ্র।অবতার হনুমানের আবির্ভাব। হনুমানের পিতার নাম ছিল কেশরী, মায়ের নাম ছিল অঞ্জনা। হনুমানের ধর্ম পিতা হলেন পবন দেবতা। ছোটোবেলা থেকেই হনুমান জী অতি চঞ্চল ছিলেন, পুরাণ অনুসারে একদা তিনি সূর্য দেবতাকে ফল হিসাবে গ্রাস করে ফেলেন, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইন্দ্র দেবতা হনুমান কে বজ্র আঘাত করে সূর্য উদ্ধার করেন। বজ্রের আঘাতে হনুমান অচেতন হলে, তাঁর ধর্ম পিতা পবন দেবতা ক্রুদ্ধ হয়ে সমস্ত রকম বায়ু রোধ করলে এক মহাবিনাশের উপক্রম হয়। এরপর ব্রহ্মা ও অনান্য দেবগণ হনুমান জীকে সুস্থ করে- তাঁকে নানান আশীর্বাদ প্রদান করেন। হনুমান জী চার যুগে অমর পুরাণে তাই বলা হয়েছে।
হনুমান জী, শ্রীরামচন্দ্রের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। মা সীতার অপহরণের পর হনুমান জীর উদ্যোগে ভগবান রামচন্দ্রের সাথে বানর রাজ বালীর ভাই সুগ্রীবের বন্ধুত্ব হয়। বালী আবার নিজ ভ্রাতা সুগ্রীবের বৌ রুমাকে অপহরণ করে বন্দী করে রেখেছিল- রামচন্দ্র বালীকে বধ করে সুগ্রীবকে বানর জাতির রাজা বানান। হনুমান জী প্রথম অপহৃতা মা সীতার সংবাদ আনেন । ভগবান রামচন্দ্রের লঙ্কা আক্রমণ কালে হনুমান জী নিজে প্রচুর রাক্ষস সৈন্য, বড় বড় রাক্ষস বীরদের বধ করেন, এবং যুদ্ধে ব্রহ্মাস্ত্রে আহত লক্ষণ এর প্রান বাঁচাতে তিনি গন্ধমাদন পর্বত টাই তুলে আনেন। এভাবে হনুমান জী ভগবান রামচন্দ্রের সেবা করেন। হনুমান জীর প্রবল ভক্তির একটি কথা পুরাণে পাওয়া যায়। ভগবান রামচন্দ্র তখন রাক্ষস বাহিনী আর লঙ্কেশ রাবণকে বধ করে ভাই লক্ষণ ও সীতাদেবীকে নিয়ে ১৪ বছর বনবাস শেষে অযোধ্যাতে ফিরেছেন।
একদা মা সীতা দেবী হনুমান জীকে একটি মুক্তার মালা উপহার দিলেন। ভক্ত হনুমান জী মালাটি নিয়ে দেখে, নেড়ে চেড়ে ছিড়ে মুক্তো গুলো দাঁত দিয়ে চিবিয়ে ফেলে দিলেন। সকলে অবাক হলো ভাবল বনের পশু মুক্তার মালার মর্ম কি জানে? সকলে হনুমান জীকে কারন জিজ্ঞাসা করলে হনুমান জী বললেন— “যাহাতে রাম নাম নেই তাহাতে কি প্রয়োজন?”
সকলে বলল “তাই যদি হয়, তবে তোমার অন্তরে কি রাম নাম আছে? থাকলে দেখাও দিকি।” এই শুনে হনুমান জী নিজের নখ দিয়ে নিজের বুক বিদীর্ণ করলেন সকলে দেখলো সেখানে ভগবান রামচন্দ্র মা সীতা বিরাজমান। হনুমান জীর এই শিক্ষা আমাদের পথ দেখায়। যাঁহাতে ভগবানের নাম নেই, যেখানে ভগবানের নাম কীর্তন হয় না সেই স্থান পরিত্যাগ করা উচিৎ।
সংস্কৃত হনুমান স্তোত্র শ্রীহনুমন্নমস্কারঃ
Obeisance to Shri Hanuman. Translation by A. Narayanaswami.
(১)
গোষ্পদী- কৃত- বারীশং মশকী- কৃত- রাক্ষসম্।
রামাযণ- মহামালা- রত্নং বন্দেঽনিলাত্মজম্।।
Large I make obeisance to the son of Vayu (the Wind God), who tamed the vast ocean into a hoof-print (in the mud), turned the demons into mosquitoes, and is the gem in the great garland that the Ramayana is.
অর্থাৎ— আমি বায়ুর পুত্রকে (বায়ু দেবতা) প্রণাম জানাই, যিনি বিশাল সমুদ্রকে একটি খুরের ছাপে (কাদাতে) নিয়ন্ত্রণ করেছেন, রাক্ষসকে মশায় পরিণত করেছেন এবং রামায়ণের মহান মালাতে রত্ন।
(২)
অঞ্জনা- নন্দনং- বীরং জানকী- শোক- নাশনম্।
কপীশমক্ষ- হন্তারং বন্দে লঙ্কা- ভযঙ্করম্।।
Large I make obeisance to the hero who gladdened Anjana (his mother), the destroyer of Sita’s sorrow, the lord of the monkeys, the slayer of (Ravana’s son) Aksha, and a terror to (the inhabitants of) Lanka.
অর্থাৎ— যে বীর অঞ্জনাকে (তাঁর মা), সীতার দুঃখের বিনাশকারী, বানরদের অধিপতি, (রাবণের পুত্র) অক্ষের হত্যাকারী এবং (লঙ্কার অধিবাসীদের) ভয়ঙ্কর বীরকে আমি প্রণাম জানাই।
(৩)
মহা- ব্যাকরণাম্ভোধি- মন্থ- মানস- মন্দরম্।
কবযন্তং রাম- কীর্ত্যা হনুমন্তমুপাস্মহে।।
Large I worship Hanuman whose intellect, like the Mandara mountain (which was used to churn the ocean of milk for nectar) acted as the churning rod for the great ocean of the science of grammar, and who keeps praising the fame of Rama.
অর্থাৎ— বৃহৎ আমি হনুমানকে উপাসনা করি যার বুদ্ধি, মন্দার পর্বতের মতো (যা অমৃতের জন্য দুধের সমুদ্র মন্থন করতে ব্যবহৃত হত) ব্যাকরণের বিজ্ঞানের মহাসমুদ্রের মন্থনের কাঠি হিসাবে কাজ করেছিল এবং যিনি রামের কীর্তির প্রশংসা করে চলেছেন।
(৪)
উল্লঙ্ঘ্য সিন্ধোঃ সলিলং সলীলং যঃ শোক- বহ্নিং জনকাত্মজাযাঃ।
আদায তেনৈব দদাহ লঙ্কাং নমামি তং প্রাঞ্জলিরাঞ্জনেযম্।।
Large I bow with folded hands to Anjaneya who, having crossed the water of the ocean as if in play, took away the fire of grief consuming Sita and with that fire itself burnt down Lanka.
অর্থাৎ— অঞ্জনেয়াকে হাত জোড় করে প্রণাম জানাই, যিনি খেলার মতো সমুদ্রের জল পার হয়ে সীতাকে গ্রাসকারী শোকের আগুন কেড়ে নিয়েছিলেন এবং সেই আগুনে নিজেই লঙ্কাকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
(৫)
মনোজবং মারুত- তুল্য- বেগং জিতেন্দ্রিযং বুদ্ধিমতাং বরিষ্ঠম্।
বাতাত্মজং বানর- যূথ- মুখ্যং শ্রীরাম- দূতং শিরসা নমামি।।
Large I bow with bent head to him who is quick of mind, fast as the wind, the conqueror of the sense organs, the best among the wise, the son of Vayu, chief of the monkey hordes, and the messenger of Shri Rama.
অর্থাৎ— বৃহৎ আমি তাকে মাথা নিচু করে প্রণাম করি যিনি দ্রুত চিত্ত, বায়ুর মত দ্রুত, ইন্দ্রিয়ের বিজয়ী, জ্ঞানীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, বায়ুর পুত্র, বানরবাহিনীর প্রধান এবং শ্রী রামের দূত।
(৬)
আঞ্জনেযমতিপাটলাননং কাঞ্চনাদ্রি- কমনীয- বিগ্রহম্।
পারিজাত- তরু- মৃল- বাসিনং ভাবযামি পবমান- নন্দনম্।।
Large I meditate on the beloved son of Vayu, Anjaneya, with bright-red countenance and body attractive as a golden mountain, who lives under the Parijata tree.
অর্থাৎ— বৃহৎ আমি বায়ুর প্রিয় পুত্র অঞ্জনেয়ের ধ্যান করি, উজ্জ্বল-লাল মুখমণ্ডল এবং সোনার পাহাড়ের মতো আকর্ষণীয় দেহ, যিনি পারিজাত গাছের নীচে বাস করেন।
(৭)
যত্র যত্র রঘুনাথ- কীর্তনং তত্র তত্র কৃত- মস্তকাঞ্জলিম্।
বাষ্প- বারি- পরিপূর্ণ- লোচনং মারুতির্নমত রাক্ষসান্তকম্।।
Large Bow to Hanuman, the slayer of the demons, who is present with folded hands raised to his head, his eyes brimming with tears of joy, whenever the name of Shri Rama is uttered with devotion.
অর্থাৎ— রাক্ষসদের বধকারী হনুমানের কাছে বৃহৎ ধনুক, যিনি মাথার কাছে হাত জোড় করে উপস্থিত আছেন, যখনই ভক্তি সহকারে শ্রী রামের নাম উচ্চারণ করা হয় তখনই তাঁর চোখ আনন্দের অশ্রুতে পূর্ণ হয়।
হনুমান জী দ্বাপর যুগেও ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেছেন। হনুমান জীর অনুরোধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের রূপ ধারন করেন হনুমান জীকে একবার দর্শন দিয়েছিলেন। এবং বলা হয় হনুমান জী পরম বৈষ্ণব, ভগবান হরির প্রিয় ভক্ত একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে—
যত্র যত্র রঘুনাথকীর্তনং তত্র তত্র কৃতমস্তকাঞ্জলিম্ ।
বাষ্পবারিপরিপূর্ণলোচনং মারুতিং নমত রাক্ষসান্তকম্ ।।
অর্থাৎ— যেখানে যেখানে রঘুনাথের গুণগান করা হয়, সেখানে সেখানেই যিনি মস্তকে অঞ্জলি স্থাপনপূর্বক সাশ্রুনয়নে অবস্থান করেন, সেই রাক্ষস বিনাশী মারুতিকে (হনুমান) সকলে নমস্কার করুন।
হনুমান জীর প্রনাম মন্ত্রে বলা হয়েছে—
মনোজবং মারুততুল্যবেগং জিতেন্দ্রিয়ং বুদ্ধিমতাং বরিষ্ঠম্ ।
বাতাত্মজং বানরযূথমুখ্যং শ্রীরামদূতং শিরসা নমামি ।।
অর্থাৎ— যিনি মন ও বায়ূর ন্যায় দ্রুতগামী, বুদ্ধিমান, ব্যাক্তি দিগের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বানর বাহিনীর অধিনায়ক, সেই শ্রীরামের দূত, জিতেন্দ্রিয় পবন নন্দনকে অবনত মস্তকে নমস্কার করি।
শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন সংস্কৃতি ও বেদ
বেদান্তদর্শন প্রচারক, বাংলাদেশ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ, জয় শ্রীরাম,
জয় বজরংবলী, হর হর মহাদেব।
রামায়ণ সম্পর্কে আরো তথ্য পেতে পবিত্র বেদ পেইজে সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
0 Comments
ওঁ তৎ সৎ
নমস্কার