শিব প্রণাম মন্ত্র, শিব গায়ত্রী মন্ত্র, শিব ধ্যান মন্ত্র, শিবের স্তোত্র মন্ত্র দেখুন শিব মন্ত্র জপ করুন, আপনার সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ুন।
"শিব নামে জপ করুন"
ওঁ নমঃ শিবায়।
"শিবের প্রণাম মন্ত্র"
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারুণাত্রায় হেতবে ।
নিবেদিতামি চাত্মানং ত্বং গত্বিং পরমেশ্বরম ॥
(যিনি শিব, যিনি শান্তমূর্ত্তি, যিনি সত্ত্ব রজঃ তমঃ এই তিন জগৎকারণের কারণ, তাঁহাকে প্রণাম করি। হে পরমেশ্বর, তোমাকে আত্মসমর্পণ করিতেছি, তুমি আমার গতি (আশ্রয়)।
সরলার্থঃ— তিন কারণের (সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের) হেতু শান্ত শিবকে প্রণাম। হে পরমেশ্বর তুমিই পরমগতি। তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করি।
'তস্মৈ নমঃ পরমকারণ কারণায় দীপ্তোজ্জ্বলজ্জ্বলিত পিঙ্গললোচনায়
নাগেন্দ্রহাররকৃত কুন্ডলভূষণায় ব্রহ্মেন্দ্রবিষ্ণু বরদায় নমঃ শিবায় ।।
সরলার্থঃ— যিনি কারণের পরম কারণ, যাঁর অতি উজ্জ্বল দেদীপ্যমান পিঙ্গল নয়ন, কুন্ডলীকৃত সর্পরাজের হার যাঁর কন্ঠভূষণ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং ইন্দ্রাদি দেবতাকে যিনি বর প্রদান করেন, সেই পরম শিবকে আমার প্রণাম।
"শিব গায়ত্রী মন্ত্র"
ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ।।
সরলার্থঃ— যিনি তৎপুরুষ ব্রহ্ম, যিনি সব পুরীতে শয়ান থাকেন, তাকে জেনে মহাদেবকে ধন্যবাদ করি, সেই রুদ্র ভগবান আমার বুদ্ধিকে শিবতত্বে প্রেরণ করুন ।।
"শিবের ধ্যানমন্ত্র"
একটি ফুল নিয়ে (সম্ভব হলে কূর্মমুদ্রায় ফুলটি নেবেন) শিবের ধ্যান করবেন। শিবের সাধারণ ধ্যানমন্ত্র ও বাণেশ্বর ধ্যানমন্ত্র দুটি নিচে দেওয়া হল।
"শ্রী শ্রী শিবের ধ্যানমন্ত্র"
শান্তং পদ্মাসনস্থং শশিধরমকুটং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রং
শূলং বজ্রং চ খড্গং পরশুমভয়দং দক্ষভাগে বহন্তম্।
নাগং পাশং চ ঘণ্টাং বরডমরুয়ুতং চাঙ্কুশং বামভাগে
নানালঙ্কারয়ুক্তং স্ফটিকমণিনিভং পার্বতীশং ভজামি ॥ (১)
বন্দে দেবমুমাপতিং সুরগুরুং বন্দে জগত্কারণং
বন্দে পন্নগভূষণং মৃগধরং বন্দে পশূনাম্পতিম্।
বন্দে সূর্যশশাঙ্কবহ্নিনয়নং বন্দে মুকুন্দপ্রিয়ং
বন্দে ভক্তজনাশ্রয়ং চ বরদং বন্দে শিবং শঙ্করম্ ॥ (২)
মৌলৌ চন্দ্ৰ-দলং গলে চ গরলং জূটে চ গঙ্গাজলং
ব্যালং বক্ষসি চানলঞ্চ নয়নে শূলং কপালং করে।
বামাঙ্গে দধতং নমামি সততং প্ৰালেয়শৈলাত্মজাং
ভক্তক্লশহরং হরং স্মরহরং কাপুর গৌরং পরম ॥ (৩)
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরি-নিভং চারুচন্দ্ৰাবতংসং
রত্নাকল্পোজ্জলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্ৰসন্নম্।
পদ্মাসীনং সমস্তাৎস্তুতমমর-গণৈর্ব্যাস্ত্ৰকৃত্তিং বসনং
বিশ্বাস্থ্যং বিশ্ব-বীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্তং ত্ৰিনেত্ৰম্ ॥ (৪)
শ্ৰী শ্ৰী শিবের ধ্যানম্ অনুবাদ (১-৪)
প্ৰশান্তমূৰ্ত্তি, পদ্মাসনে যিনি অবস্থিত, চন্দ্ৰ যাহার মস্তকে মুকুটিরূপে বিরাজ করিতেছেন, যিনি পঞ্চমুখ ও ত্ৰিনেত্ৰ, যিনি দক্ষিণ বাহুতে শূল, বজ্র, খড়গ, কুঠার ও বর মুদ্রা ধারণ করেন এবং বাম বাহুতে যিনি সর্প, নাগপাশ, ঘণ্টা, ডমরু ও অঙ্কুশ ধারণ করেন, নানাবিধ অলঙ্কারে বিভূষিত স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ ও শুভ্ৰ সেই পাৰ্ব্বতী-পতি মহাদেবকে ভজনা করিতেছি॥
দেবতাগণের গুরু দেব-উমাপতিকে প্ৰণাম করিতেছি, যিনি জগতের কারণ তাঁহাকে প্ৰণাম করিতেছি, সৰ্পগণ যাঁহার শরীরের ভূষণ, যিনি মৃগ (মৃগ নামক মুদ্রা) ধারী তাহাকে প্ৰণাম করিতেছি। যিনি পশুগণের (জীবগণের) পতি, তাহাকে প্ৰণাম করিতেছি, সূৰ্য্য, চন্দ্র ও অগ্নি যাঁহার নয়ন, তাহাকে প্ৰণাম করিতেছি, যিনি মুকুন্দের প্রিয় তাহাকে প্ৰণাম করিতেছি, যিনি ভক্তজনের আশ্রয় ও তাহাদের বরদাতা তাঁহাকে প্রণাম করিতেছি, যিনি শিব (মঙ্গলময়) ও শঙ্কর (মঙ্গলকর) তাহাকে প্ৰণাম করিতেছি!
যাঁহার ভালদেশে চন্দ্ৰকলা, গলদেশে গরল (কালকূট নামক বিষ), জটাজূটে দ্রবময়ী গঙ্গা, বক্ষে সৰ্পমালা, নয়নে অনল, হস্তে শূল ও কপাল এবং অঙ্গের বামভাগে শৈলবালা বিরাজ করিতেছেন; যিনি ইহাদিগকে ধারণ করেন, ভক্তদুঃখহারী, কন্দৰ্পবিনাশকারী, কাপুরের ন্যায় ধবলকান্তি, সেই পরাৎপর শ্ৰীমহাদেবকে প্ৰণাম করিতেছি॥
যিনি রজত পৰ্ব্বতের ন্যায় ধবল ও উন্নত, চারুচন্দ্ৰাভারণে র্যাহার ভালদেশ অলঙ্কত, রত্নময় বেশ ভূষায় যিনি বিরাজমান, যিনি কুঠার, মৃগ নামক মুদ্রা, বর ও অভয় হস্তে ধারণ করেন, র্যাহার মূৰ্ত্তি প্ৰসন্নমধুর, যিনি পদ্মাসনে আসীন, চারিদিক হইতে দেবতাগণ র্যাহার স্তুতি করিতেছেন, র্যাহার পরিধানে ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্ম, যিনি এই বিশ্ব-তরুর বীজ এবং বিশ্বের আদি যনি ত্ৰিনেত্রী ও পঞ্চানন সেই সৰ্ব্বভয়হারী মহেশ্বরকে সর্বদা ধ্যান করিবে॥
"বাণেশ্বর শিবের ধ্যান"
ঐ প্রমত্তং শক্তিসংযুক্তং বাণাখ্যঞ্চ মহাপ্রভাং।
কামবাণান্বিতং দেবং সংসারদহনক্ষমম্।।
শৃঙ্গারাদি-রসোল্লাসং বাণাখ্যং পরমেশ্বরম্।
এবং ধ্যাত্বা বাণলিঙ্গং যজেত্তং পরমং শিবম্।।
শিব স্তোত্র : (প্রভাতে ও সন্ধ্যায় স্তব করুন)
প্রভুমীশ-মনীশ-মশেষগুণং গুণহীন-মহীশ-গণাভরণাম।
রণ-নির্জ্জিত-দুর্জ্জয়-দৈত্যপুরং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম॥ (১)
গিরিরাজ-সুতান্বিত-বামতনুং তনু-নিন্দিত-রাজত-ভূমিধরম্।
বিধি-বিষ্ণু-শিরোধৃত-পাদযুগং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম॥ (২)
শশলাঞ্ছিত-রঞ্জিত-সন্মুকুটং কটলম্বিত-সুন্দর-কৃত্তিপটম্।
সুরশৈবলিনী-কৃত-পূতজটং প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম॥ (৩)
নয়নত্রীয়-ভূষিত চারুমুখং মুখপদ্ম বিনিন্দিত কোটিবিধুম।
বিধু-খণ্ড-বিমণ্ডিত-ভাল-তটং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম॥ (৪)
বৃষ রাজ-নিকেতনমাদি গুরুং গরলাশন-মাৰ্ত্তি-বিনাশ করিম।
বরদাভয়-শূলবিষাণ-ধরং প্রণমামি শিবং শিব-কল্পতরুম॥ (৫)
মকরধ্বজ-মত্ত-মাতঙ্গ-হরং করিচর্ম্ম-বিলাস-বিশেকরম
স্ফুরদাদ্ভূত-কীকস-মাল্যধরং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম॥ (৬)
জগদুদ্ভবপালননাশকরং কারুণেশ-গুণত্ৰয়া-রূপধরম্।
প্রিয়মাধব-সাধুজনৈকগতিং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্॥ (৭)
প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জনকং মুনি-যোগি-মনোহম্বুজ-ষট্পদকম।
ভজতোহখিল-দুঃখ সমৃদ্ধি হরং প্রণমামি শিবং শিবকল্পতরুম্॥ (৮)
শিবস্তোত্রের অনুবাদ (১-৮)
তুমি নিগ্রহ ও অনুগ্রহে সমর্থ বলে প্রভু, তুমি ঈশ্বর, তোমার ঈশ্বর কেউ নেই, তোমার গুণ সকল বলে শেষ করা যায় না; তুমি আবার নির্গুণ, প্রধান সর্পগণ তোমার আভরণ, তুমি যুদ্ধে ত্রিপুর নামক দৈত্য জয় করেছ, হে মঙ্গলদানে-কল্পতরু! হে শিব! আমি তোমাকে প্রণাম করি।
তোমার বাম অঙ্গে পার্বতী বিরাজ করতেন, তোমার তনু রজতগিরিকেও পরাস্ত করেছে, তোমার পদদ্বয় ব্ৰহ্মা ও বিষ্ণুর মস্তকে অবস্থিত, হে শিব! হে শিব-কল্পতরু! তোমাকে আমি প্রণাম করি।
তোমার সুন্দর মুকুটে চন্দ্র শোভা ছড়াচ্ছেন, সুন্দর বাঘের চামড়া তোমার কটিতট বিলম্বিত, স্বর্গগঙ্গা দ্বারা তোমার জটা পবিত্রীকৃত, হে শিবকল্পতরু আমি তোমাকে প্রণাম করি।
তোমার চারুমুখ মণ্ডল নয়নত্রয়ভূষিত, তোমার মুখপদ্ম কোটি চন্দ্রকে পরাস্ত করছে, তোমার ললাটদেশ চন্দ্রকলা বিমণ্ডিত, হে শিব! হে শিবকল্পতরু আমি তোমাকে প্রণাম করি। তুমি বৃষ রাজকে বাহন করেছ, তুমি আদি গুরু, তুমি বিষপান করেছ, তুমি আর্ত্তজনের দুঃখনাশ কর, তুমি বর, অভয়, ত্রিশূল ও শিঙ্গা ধারণ করছ, হে শিব, হে শিবকল্পতরু, আমি তোমাকে প্রণাম করি।
তুমি মদমত্ত মাতঙ্গের ন্যায় দুর্জয় কামকে বিনাশ করেছিলে, তুমি হাতির চামড়া ধারণ করে তার বিশেষ শোভা সম্পাদনা করছ, তুমি উজ্জ্বল অদ্ভূত অস্থিমালা ধারণ করছ, হে শিব! হে শিবকল্পতরু আমি তোমাকে প্রণাম করি।
তুমি জগতের সৃষ্টি স্থিতি নাশ কর্তা, তুমি করুণার ঈশ্বর, তুমি তিন গুণে তিন মূর্তি ধারণ করছ, তুমি মাধবের প্রিয়, তুমি সাধু জনের একমাত্র গতি, হে শিব! হে শিবকল্পতরু! আমি তোমাকে প্রণাম করি।
তুমি ভূতনাথ, তুমি সেবকদের সুখ বর্ধক, তুমি মুনি ও যোগিদের মানস পদ্মের ভ্রমর, তুমি তোমার ভক্তদের নিখিল দুঃখভার হরণ কর, হে শিব! হে শিবকল্পতরু। আমি তোমাকে প্রণাম করি।
"ক্ষমা প্রার্থনা"
আবাহনং ন জানামি নৈব জানামি পুজনং।
বিসর্জ্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বর॥
সরলার্থঃ— তুমি মঙ্গল স্বরূপ তোমাকে প্ৰণাম। তুমি শান্তমূৰ্ত্তি, তুমি বিবিধ কারণের হেতু; হে পরমেশ্বর আমি তোমাকে আত্মনিবেদন করিতেছি তুমিই আমার গতি।
শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন ধর্মের সংস্কৃতি ও বেদ
বেদান্তদর্শনের প্রচারক, চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ, জয় শ্রীরাম
হর হর মহাদেব।
শিব মন্ত্র জপ করুন,
আপনার সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ুন।
0 Comments
ওঁ তৎ সৎ
নমস্কার