সনাতন ধর্মে ঈশ্বরের সৃষ্টি জন্মান্তরবাদ অন্যতম একটি ভিত্তিপ্রস্তর। মৃত্যুর পর পূর্বজন্মের কর্ম অনুসারে বিভিন্ন শরীর ধারণই জন্মান্তর প্রক্রিয়া। জীবের এই জন্ম রহস্য সম্পর্কে শাস্ত্র ঘোষণা করেছেন—
সূর্য্যং চক্ষুর্গচ্ছতু বাতমাত্মা দ্যাং চ গচ্ছ পৃথিবীং চ ধর্মণা ।
অপো বা গচ্ছ যদি তত্রতে হিতমোষধীযু প্রতিতিষ্ঠা শরীরৈঃ॥
(ঋগ্বেদ, ১০/১৬/৩)
শব্দার্থঃ— (সূর্য্যম্) সূর্য্যে (চক্ষুঃ) দৃষ্টি শক্তি (গচ্ছতু) চলিয়া যাউক (বাতম্) বায়ুতে (আত্মা) আত্মা (চ) এবং (দ্যাম্) দ্যুলোকে (চ) এবং (পৃথিবীম্) পৃথিবীতে (ধর্মনা) ধর্মানুসারে (অপঃ) জলে (বা) বা (গচ্ছ) যাও (যদি তত্র) যদি সেখানে (তে) তোমার (হিতম্) কল্যাণ (ওষধীষু) ওষধিতে (প্রতিতিষ্ঠ) স্থিত হও (শরীরৈঃ) শরীর ধারণ করিয়া।
অনুবাদঃ— চক্ষু সূর্য্যলোকে অর্থাৎ তেজপুঞ্জে চলিয়া যাউক এবং আত্মা বায়ুতে চলিয়া যাউক। স্বকৃত-ধর্মানুসারে দ্যুলোক ও পৃথ্বীলোকের জলে কিংবা কল্যাণকর হইলে ওষধিতেও শরীর গ্রহণ করিয়া অবস্থান করে।
অপানতি প্রাণতি পুরুষো গর্ভে অন্তরা।
যদাত্বংপ্রাণ জিম্বস্যথ স জায়তে পুনঃ॥
(অথর্ববেদ, ১১/৪/৬)
শব্দার্থঃ— মনুষ্য (গর্ভে অন্তরা) গর্ভের মধ্যে (প্রাণতি) শ্বাস গ্রহণ করে (অপানতি) প্রশ্বাস ত্যাগ করে (জিম্বসি) প্রেরণা দাও (অথ) তখনই (সঃ) সে (পুনঃ জায়তে) পুনরায় জন্ম গ্রহণ করে।
অনুবাদঃ— মনুষ্য গর্ভের মধ্যে শ্বাস গ্রহণ করে ও প্রশ্বাস ত্যাগ করে। হে প্রাণ! যখন তুমি প্রেরণা দান কর তখনই সে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে।
উতেষাং পিতোত বা পুত্র এষামুতৈযাং জ্যেষ্ঠ উত বা কনিষ্ঠ ।
একো হ দেবো মনসি প্রবিষ্টঃ প্রথমো জাতঃ সউ গর্ভে অন্তঃ॥
(অথর্ববেদ, ১০/৮/২৮)
শব্দার্থঃ— (উত) এবং (এষাম্) ইহাদের (পিতা) পিতা (উত বা) অথবা (এযাম্) ইহাদের (পুত্রঃ) পুত্র (এষামৃত) এবং ইহাদের (জ্যেষ্ঠ) জ্যেষ্ঠ (এষম্) ইহাদের (উত বা) অথবা (কনিষ্ঠঃ) কনিষ্ঠ (একঃ) এক (দেবঃ) দেব (মনসি) মনে (প্রবিষ্টঃ) প্রবেশ করিয়া (প্রথমঃ) প্রথমে (জাতঃ) জন্মিয়া (সঃ) সে (গর্ভে অন্তঃ উ) গর্ভের ভিতরও আসে।
অনুবাদঃ— জীবাত্মাই সম্বন্ধ বিশেষে কাহারও পিতা, কাহারও পুত্র, কাহারও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, কাহারও বা কনিষ্ঠ ভ্রাতা হন। এই একই দেব মনে প্রবিষ্ট হইয়া একবার জন্মগ্রহণ করে এবং পরেও গর্ভে প্রবেশ লাভ করে।
পুরাণেও জন্মান্তর প্রক্রিয়ার ঈঙ্গিত প্রদান করছে বিভিন্নভাবে দেখা যাক—
চতুরশীতি লক্ষাণি চতুর্ভেদশ্চ জন্তরঃ।
অগুজাঃ স্বেদজাশ্চৈব উদ্ভিজ্জাশ্চ জরায়ুজাঃ॥
(গরুড় পুরাণ, প্রেতকল্প)
অর্থাৎ— অন্য বা ডিম, স্বেদঞ্জ, উদ্ভিত এবং জরায়ু থেকে জাত এই চারপ্রকার ভেদে জীব বিভিন্ন যোনিতে ৮৪ লক্ষবার ভ্রমণ করে থাকে। আবার এই ৮৪ লক্ষবার কোন যোণিতে কতবার সেটিও শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
"স্থাবরং দ্বাবিংশতেলক্ষং জলজং নবলক্ষকম্।
কুর্খাশ্চ নবলক্ষং চ দশলক্ষং চ পক্ষিণঃ॥
ত্রিংশল্পক্ষং পশূনাঞ্চ চতুর্লক্ষং চ বানরাঃ।
ততো মনুষ্যতাং প্রাপ্য ততঃ কম্মাণি সধিয়েৎ।
(বৃহৎ বিষ্ণুপুরাণ)
অর্থাৎ— স্থাবরে বাইশ লক্ষবার, জলে নয় লক্ষবার, উভয়চর নয় লক্ষবার, পাখী দশ লক্ষবার, পশু ত্রিশ লক্ষবার এবং বানর জন্ম চার লক্ষবার মোট ৮৪ লক্ষবার বিভিন্ন যোনিতে জন্মগ্রহণের পর জীব মানব জন্ম লাভ করে।
উপনিষদেও জন্মান্তর প্রক্রিয়ার ঈঙ্গিত প্রদান করছে বিভিন্নভাবে দেখা যাক—
স বেদৈতং পরমং ব্রহ্ম ধাম যত্র বিশ্বং নিহিতং ভাতি
শুভ্রম্।
উপাসতে পুরুষং যে হ্যকামাস্তে শ্রুক্রমেতদতিবর্তন্তি
ধীরাঃ।।
(মুন্ডক উপনিষদ, ৩/২/১)
পদার্থঃ— ১) সঃ– সেই আত্মজ্ঞ পুরুষ ২) বেদ– জানেন ৩) এতৎ পরমং ব্রহ্ম ধাম– এই পরম আশ্রয় ব্রহ্মকে ৪) যত্র বিশ্বং নিহিতং– যাহাতে বিশ্ব নিহিত আছে ৫) শুভ্রং ভাতি– যিনি শুদ্ধ এবং প্রকাশমান ৬) উপাসতে– উপাসনা করেন ৭) পুরুষম্– সেই পুরুষের ৮) যে অকামাঃ ধীরাঃ হি– যে নিষ্কাম জ্ঞানীগণ ৯) তে শুক্রম্ এতৎ অতিবর্তন্তি– তাহারা এই শুক্রসম্ভূত দেহ অতিক্রম করেন।
অনুবাদঃ— যাহার মধ্যে সমগ্র বিশ্ব নিহিত আছে, যিনি শুদ্ধ এবং প্রকাশমান সেই আত্মজ্ঞ পুরুষ এই পরম আশ্রয় ব্রহ্মকে জানেন। যে নিষ্কাম জ্ঞানীগণ সেই পুরুষের উপাসনা করেন তাহারা এই শুক্রসম্ভূত দেহ অতিক্রম করেন অর্থাৎ তাহাদের আর পুনর্জন্ম হয় না।
"ন সাম্পরায় প্রতিভাতি বালং প্রমাদ্যন্তং বিত্তমোহের মূঢ়ম্।
অয়ং লোকো নাস্থি পর ইতি মাণী পুনঃ পূনর্বশমাপদ্যতে মোঃ"
অর্থাৎ— যে ব্যক্তি বালকের ন্যায় বিবেকহীন, বিষয়ে অসক্তি হেতু যে পরমার্থে অনবহিত, যার চিত্ত ধনমোহে আচ্ছন্ন তার নিকট পরলোকতত্ত্ব বা উহার সাধন স্পষ্ট প্রকাশ হয়না। ইহলোক আছে পরলোক নাই- এরূপ যে ব্যাক্তি যে ব্যক্তি মনে করে সে বারবার জন্ম মৃত্যুতে ঘুরিতে থাকে।
উক্ত শ্লোকে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে থাকবে বলতে মূলত জন্মান্তর প্রক্রিয়াকেই বুঝানো হয়েছে।
"যোনিমন্যে প্রাপদ্যন্তে শরীরত্বয় দেহিনঃ।
স্থানুমন্যেহ নুসংযন্তি যথাকর্ম যথাশ্রুতম্।
(কঠোউপনিষদ, ২/২/৭)
অর্থাৎ— স্বীয় জ্ঞান ও কর্ম অনুসারে কোনো কোনো জীব মানুষ, পশু ইত্যাদি প্রাণীরূপে জন্মগ্রহণ করে। আবার কেউ কেউ বৃক্ষ লতাদি স্থাবর দেহ প্রাপ্ত হয়।
পতেঙ্গা বা শকুনির্বা শার্দুলো বা সিংহো বা মৎস্যো বা পরশ্বা বা পুরুষো বাহন্যে বৈতেষু স্থানেষু প্রত্যাজায়তে যথাকর্ম যথবিদ্যম্।
(কৌশিতকি উপনিষদ)
অর্থাৎ— নিজের কর্ম ও জ্ঞান অনুসারে কীট, পতঙ্গ, পক্ষী, ব্যাঘ্র, সিংহ, মৎস্য, সর্প বা মনুষ্য এই সকল দেহ ধারণ করে এই লোকে আবার জন্মগ্রহণ করে।
এছাড়াও উপনিষদের বেশকিছু শ্লোকে জন্মান্তর বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। উপনিষদের পাশাপাশি গীতায়ও জন্মান্তর বা আত্মার দেহান্তর গমন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়—
বহূ্নি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন ।
তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরন্তপ ।।
(গীতা, ৪/৫)
অর্থাৎ— শ্রীভগবান্ বলিলেন - হে অর্জুন, আমার এবং তোমার বহু জন্ম অতীত হইয়াছে। কিন্তু আমি সে সকল জানি; হে পরন্তপ, তুমি তা জানো না।
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ।।
(গীতা, ২/২২)
অর্থাৎ— যেমন মনুষ্য জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া নূতন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ আত্মা জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করিয়া অন্য নূতন শরীর পরিগ্রহ করে।
এখানে বলা হয়েছে, মানুষ যেমন পুরানো বস্ত্র পরিত্যাগ করে অন্য নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, তেমনই জীবাত্মা পুরনো শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর গ্রহণ করে।
শরীরং যদবাপ্নোতি যচ্চাপ্যুৎক্রামতীশ্বরঃ ।
গৃহীত্বৈতানি সংযাতি বায়ুর্গন্ধানিবাশয়াৎ ।।
(গীতা, ১৫/৮)
অর্থাৎ— যেমন বায়ু, পুষ্পাদি হইতে গন্ধবিশিষ্ট সূক্ষ কণাসমূহ লইয়া যায় তদ্রূপ যখন জীব এক দেহ পরিত্যাগ করিয়া অন্য দেহে প্রবেশ করেন, তখন এই সকলকে (এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও মনকে) সঙ্গে করিয়া লইয়া যান।
এখানে বলা হয়েছে, বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ বহন করে অন্য ফুলে গমন করে সেরূপ জীবাত্মা যখন এক দেহ পরিত্যাগ করে অন্য দেহে প্রবেশ করে, তখন মনসহ ইন্দ্রিয়গুলোকে সঙ্গে নিয়ে যায়; অর্থাৎ পূর্ব দেহের ইন্দ্রিয়াদি নতুন দেহে প্রবেশ করে।
উৎক্রামন্তং স্থিতং বাপি ভুঞ্জানং বা গুণান্বিতম্ ।
বিমূঢ়া নানুপশ্যন্তি পশ্যন্তি জ্ঞানচক্ষুষঃ ।।
(গীতা, ১৫/১০)
অর্থাৎ— জীব কিরূপে সত্ত্বাদি গুণসংযুক্ত হইয়া দেহে অবস্থিত থাকিয়া বিষয়সমূহ ভোগ করেন, অথবা কিরূপে দেহ হইতে উৎক্রান্ত হন, তাহা অজ্ঞ ব্যক্তিগণ দেখিতে পান না, কিন্তু জ্ঞানিগণ জ্ঞাননেত্রে দর্শন করিয়া থাকেন।
এখানে বলা হয়েছে, জীবাত্মা কীরূপে সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ গুণের সাথে সংযুক্ত হয়ে দেহে অবস্থান করে বিষয়সমূহ ভোগ করে অথবা কীরূপে দেহান্তর গমন করে তা অজ্ঞ ব্যক্তিগণ দেখতে পায় না, কিন্তু জ্ঞানিগণ জ্ঞানচক্ষুতে তা দর্শন করে থাকেন।
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- ৬/৪১-৪৫)
প্রাপ্য পুণ্যকৃতাং লোকানুষিত্বা শাশ্বতীঃ সমাঃ ।
শুচীনাং শ্রীমতাং গেহে যোগভ্রষ্টোহভিজায়তে ।।
(গীতা, ৬/৪২)
অর্থাৎ— যোগভ্রষ্ট পুরুষ পুণ্যকর্মকারীদিগের প্রাপ্য স্বর্গলোকাদি প্রাপ্ত হইয়া তথায় বহু বৎসর বাস করিয়া পরে সদাচার সম্পন্ন ধনীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন।
অথবা যোগিনামেব কুলে ভবতি ধীমতাম্ ।
এতদ্ধি দুর্ল্লভতরং লোকে জন্ম যদীদৃশম্ ।।
(গীতা, ৬/৪২)
অর্থাৎ— পক্ষান্তরে, যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান্ যোগীদিগের কুলে জন্মগ্রহণ করেন । জগতে ঈদৃশ জন্ম অতি দুর্লভ (যেমন ব্যাসতনয় শুকদেবের)।
তত্র তং বুদ্ধিসংযোগং লভতে পৌর্বদেহিকম্ ।
যততে চ ততো ভূয়ঃ সংসিদ্ধৌ কুরুনন্দন ।।
(গীতা, ৬/৪৩)
অর্থাৎ— হে কুরুনন্দন, যোগভ্রষ্ট পুরুষ সেই জন্মে পূর্বজন্মের অভ্যস্ত মোক্ষবিষয়ক বুদ্ধি লাভ করেন এবং মুক্তিলাভের জন্য পুনর্বার যত্ন করেন।
পুর্বাভ্যাসেন তেনৈব হ্রিয়তে হ্যবশোহপি সঃ ।
জিজ্ঞাসুরপি যোগস্য শব্দব্রহ্মাতিবর্ততে ।।
(গীতা, ৬/৪৪)
অর্থাৎ— তিনি অবশ হইয়াই পূর্বজন্মের যোগাভ্যাসজনিত শুভ সংস্কারবশতঃ যোগমার্গে আকৃষ্ট হন । যিনি কেবল যোগের স্বরূপ-জিজ্ঞাসু, তিনিই বেদোক্ত কাম্যকর্মাদির ফল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফল লাভ করেন (যিনি যোগের স্বরূপ জানিয়া যোগাভ্যাস-পরায়ণ তাঁহার আর কথা কি ?)।
প্রযত্নাদ্ যতমানস্তু যোগী সংশুদ্ধকিল্বিষঃ ।
অনেকজন্মসংসিদ্ধস্ততো যাতি পরাং গতিম্ ।।
(গীতা, ৬/৪৫)
অর্থাৎ— সেই যোগী পূর্বাপেক্ষাও অধিকতর যত্ন করেন, ক্রমে যোগাভ্যাসদ্বারা নিষ্পাপ হইয়া বহু জন্মের চেষ্টায় সিদ্ধিলাভ করিয়া পরম গতি লাভ করেন।
যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুণ্যবানদের প্রাপ্য স্বর্গাদি লোক সকলে বহুকাল বাস করে সদাচারি গৃহে অথবা ধনীলোকদের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন৷ অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীগণের বংশে জন্মগ্রহণ করেন। এই প্রকার জন্ম এই জগতে অবশ্য অত্যন্তই দুর্লভ। হে কুরুনন্দন সেই প্রকার জন্মগ্রহণ করার ফলে তিনি পুনরায় তার পূর্বজন্মকৃত পারমার্থিক চেতনায় বৃদ্ধি সংযোগ লাভ করে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হন। তিনি পূর্ব জন্মের অভ্যাস বসে যেন অবশ হয়েও যোগ সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্র জিজ্ঞাসু পুরুষ যোগ অনুশীলন করার সময়ই বেদোক্ত সকাম কর্ম মার্গকে অতিক্রম করেন, অর্থাৎ সকাম কর্ম মার্গে যে ফল নির্দিষ্ট আছে, তার থেকে উৎকৃষ্ট ফল লাভ করেন। যোগী ইহ জন্মে পূর্বজন্মকৃত অপেক্ষা অধিকতর পাপ মুক্ত হয়, পূর্ব জন্মের সাধন সঞ্চিত সংস্কার দ্বারা লাভ করে পরমগতি লাভ করেন।
অন্যভাবে বলা যায় যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুণ্যকারীগণের শুভলোক প্রাপ্ত হয়ে বহু বৎসর সেখানে বাসকরে সদাচারবান ধনীর গৃহে জন্মগ্রহণ করে। অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীগণের কূলে জন্মগ্রহণ করেন। ঈদৃশ জন্ম জগতে অতি দুর্লভ। হে কুরুনন্দন, যোগভ্রষ্ট পুরুষ পূর্বজন্মলব্ধ সুকৃতির ফলে সেই দেহে মোক্ষপর বুদ্ধিলাভ করে সিদ্ধিলাভের জন্য অধিকতর প্রযত্ন করেন। পূর্বজন্মের অভ্যাস বশে তিনি যেন অবশ হয়েই যোগ সাধনায় প্রবৃত্ত যোগভ্রষ্ট, বেদোক্তকাম্য কর্মের ফল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফল লাভ করেন। সেই যোগী ইহজন্মে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর যত্ন করেন, ক্রমে যোগাভ্যাসে নিষ্পাপ হয়ে বহু জন্মের সাধনা সঞ্চিত সংস্কারের দ্বারা সিদ্ধিলাভ করে পরমগতি লাভ করেন। জীবাত্মা পরমাত্মার সাথে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জন্ম মৃত্যুর চক্রে ঘুরতেই থাকে। মৃত্যুর মাধ্যমে পঞ্চভূতে গঠিত এই দেহের বিনাস সাধন হলেও জীবাত্মা তার কর্মফল অনুসারে নতুন দেহ ধারণ করেন। আর এটিই জন্মান্তর প্রক্রিয়া। যেই আত্মা পরমাত্মার সাথে মিলিত হতে পারবেনা তাকে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয়। আর বর্তমান জন্মের কর্মের উপর নির্ভর করে পরজন্মের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাই মানুষের মাঝে পার্থক্য দেখা যায়। এমনকি যদি কোনো সাধককে কোন পাপের ফলে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেত হয় তবুও সে সাধন জীবনের পূর্ণতা প্রাপ্তির উপযুক্ত পরিবেশে জন্ম নিবে।
ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ
শ্রী বাবলু মালাকার
সনাতন সংস্কৃতি ও বেদ
বেদান্তদর্শন প্রচারক, বাংলাদেশ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ, জয় শ্রীরাম
হর হর মহাদেব।
0 Comments
ওঁ তৎ সৎ
নমস্কার